1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

এক শোয়েবেই ডুবছে অ্যাপোলো ইস্পাত

  • আপডেট সময় : শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবসায়িক ও আর্থিক অবস্থা কয়েক বছর ধরে নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঋণের দায়ে জর্জরিত। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে এর উৎপাদন। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৩ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। তারপর থেকেই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত রেখেছে।

ডিএসইকে দেওয়া কোম্পানিটির তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জিংক পট (যেখানে গ্যালভানাইজিং করা হয়) ভেঙে যাওয়ার কারণে কোম্পানিটির সিজিএল-২ ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে কোম্পানিটির বিক্রি ও মুনাফা ক্রমনিম্নমুখী। ওই অর্থবছরে ৩৮৬ কোটি টাকা বিক্রির বিপরীতে কোম্পানিটির মুনাফা হয় ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

পরের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত লোকসান গুণে কোম্পানিটি। এরপর থেকে কোম্পানিটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন আর প্রকাশ করা হচ্ছে না। ফলে কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক তথ্য সম্পর্কেও অন্ধকারে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

প্রাপ্ত তথ্য মতে , ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে ব্যর্থ হওয়ার কারণে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে বি ক্যাটাগরি থেকে জেড ক্যাটাগরিতে অবনমন হয় অ্যাপোলো ইস্পাত। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এজিএম হওয়ার কথা থাকলেও হাইকোর্টের কাছ থেকে আদেশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত এজিএম আয়োজন স্থগিত করেছে কোম্পানিটি।

অ্যাপোলো ইস্পাতের বর্তমানে ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৫০ কোটি টাকায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ রয়েছে ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পার্টিদের কাছে ঋণ রয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু কোম্পানিটি এই ঋণ শোধ করতে পারছে না।

মূলত অ্যাপোলো ইস্পাতের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের একগুঁয়েমির কারণেই কোম্পানির এই দুরবস্থা বলে জানিয়েছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা। মোহাম্মদ শোয়েবের অদক্ষতা, যোগ্যদের অপসারণ এবং অদক্ষ লোক নিয়োগের কারণে কোম্পানির এই পরিণতি হয়েছে। তিনি নানা কাজে কোম্পানিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। ব্যাংকঋণ পরিশোধের কোনো চিন্তাও তার নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে খুবই দুর্ব্যবহার করেন তিনি। ৭-৮ মাস ধরে বেতনও পাচ্ছেন না তারা। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধেরও কোনো উদ্যোগ নেই। দিচ্ছি, দেব বলেই পার করছেন বছরের পর বছর। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পথে বসেছেন। এমন একজন ব্যবসায়ী দয়াগঞ্জের নূরুল আলম। তিনি অ্যাপোলো ইস্পাতের কাছে ৪০ কোটি টাকা পান। কোম্পানিটি বারবার প্রতিশ্রুতি ও চেক দিলেও তা ক্যাশ হয়নি। ফলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

পাওনা টাকা আদায়ের বিষয়ে নূরুল আলম বলেন, কোম্পানির কাছে মাল নেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছি। কিন্তু কোম্পানি মালও দেয়নি, টাকাও দেয়নি। বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও টাকা ফেরত দেয়নি। তিন দফা চেক দিলেও তা ক্যাশ হয়নি। এখন আমি পথে বসে গেছি। ব্যাংকে বছরে ৪-৫ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হয়।

দিনাজপুরের ব্যবসায়ী আলহাজ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নিপু। তিনি অ্যাপোলো ইস্পাতের কাছে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা পান। দফায় দফায় তাগাদা দিয়েও টাকা ফিরে পাননি। ইতোমধ্যে তিনি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ছোট একটা ব্যবসা পরিচালনা করে ভালোভাবেই সংসার চালাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে অ্যাপোলো ইস্পাত আমাকে পথে বসিয়েছে। টাকা ফেরত দিচ্ছে না। আমিও ঋণ করে তাদের টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু টিন দেয়নি। টাকাও ফেরত পাচ্ছি না। ফলে পাওনাদার আমাকে চাপ দিচ্ছে। আমি টাকা ফেরত না পাওয়ায় তাদের টাকা ফেরত দিতে পারছি না। ফলে মহাবিপাকে রয়েছি।

শুধু নূরুল আলম বা নিপু নন, এমন আরও অনেক ব্যবসায়ী অ্যাপোলো ইস্পাতের কাছে টাকা পান। এখন তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তারা এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কোম্পানি থেকে জানা যায় , ২০১৮ সালে হঠাৎ করে অ্যাপোলোর এক পরিচালক গ্যারেজে থাকা দুটি গাড়ি লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করেন। পরবর্তী সময়ে কোনো দরপত্র এবং বাজার যাচাই ছাড়াই ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় ৭টি গাড়ি বিক্রি করে দেন। এসব গাড়ি ফ্যাক্টরি ও অফিসে ব্যবহার করা হতো।

এমনকি কোম্পানির বিপণন বিভাগের জিএম ২৫ লাখ টাকায় একটি গাড়ি নিতে চাইলেও তাকে দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে ১৬ লাখ টাকায় গাড়িটি বিক্রি করা হয়। ৬ মাস আগে ৪৭ লাখ টাকায় হোন্ডা সিআরভি কিনে তা ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এই বিষয়ে একজন পরিচালক প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

অন্যদিকে, ১৭ কোটি টাকার এআরপি ৭০ লাখ টাকায় বিক্রি করে কোম্পানি। স্টিল মিলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহার হয়। এই অ্যাসিডের পানি যেন পরিবেশের ক্ষতির কারণ না হয় সে জন্য ২০০৭ সালে এটিপি স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু পরিবেশের কথা চিন্তা না করে ওই প্ল্যান্টকে স্ক্র্যাপ হিসেবে মাত্র ৭০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। এতে একদিকে আর্থিকভাবে কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে সেটি সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর জন্য হবে মরণফাঁদ।

সূত্র জানিয়েছে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।

মৃতপ্রায় অ্যাপোলো ইস্পাত ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে শেয়ারপ্রতি ১২ টাকা প্রিমিয়ামে বাজার থেকে ২২০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন এনওএফ প্ল্যান্ট স্থাপন ও ব্যাংকঋণ পরিশোধের জন্য মূলধন সংগ্রহ করেছিল তারা।

কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে আইপিও অনুমোদন না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও খায়রুল কমিশন আইপিওটির অনুমোদন দেয়।

অ্যাপোলো ইস্পাতের পারফরম্যান্সের অধোগতি শুরু মূলত ২০১৬ সালের শেষের দিকে। ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের একগুঁয়েমির কারণে কোম্পানির এই দুরাবস্থা। শিল্পপতি দীন মোহাম্মদ অসুস্থ হওয়ার পর বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার শাহা আলমকে বাদ দিয়ে অযোগ্য মোহাম্মদ রফিককে নিয়োগ দেন মোহাম্মদ শোয়েব। এছাড়া আরেকজনকে অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি।

কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ভারে কোম্পানিটি এখন জর্জরিত। এছাড়া পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধের চাপতো আছেই। এসব কারণে কোম্পানিটির উৎপাদনে ফেরা প্রায় অনিশ্চিত। যে কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে টেনশনে দিন কাটাচ্ছেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সূচকের পতনে কমেছে লেনদেন

  • ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪