মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার নতুন আরও ৮ দেশে শেয়ারবাজারে তালিকভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মা নতুন করে বিচরণ শুরু করেছে। দেশগুলো হলো- ওমান, লেবানন, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, কসোভা, মেক্সিকো, কঙ্গো এবং মঙ্গোলিয়া।
আগের বছরে নতুন করে চারটি দেশে কোম্পানিটির বিচরণ শুরু হয়েছে। দেশ চারটি হলো- মালদ্বীপ, পাকিস্তান, নিকারাগুয়া ও ডোমিনিকান রিপাবলিক।
গত দুই বছরে প্রবেশ করা নতুন ১২টি দেশ নিয়ে কোম্পানিটি বর্তমানে বিশ্বের ৭৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। দেশের ওষুধ রপ্তানির ২২ শতাংশে বেশি এখন কোম্পানিটির দখলে।
বেক্সিমকো ফার্মার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এর অভ্যন্তরীণ বিক্রয় আগের বছরের তুলনায় ১৫.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২,৬৩৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
আর রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ১৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩১২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় উঠেছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘বৈশ্বিক ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা আমাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
প্রাপ্ত তথ্য মতে , বর্তমানে দেশের ওষুধের চাহিদা রয়েছে ২৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকার। এরমধ্যে ৯ শতাংশ সরবরাহ করছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের।
বেক্সিমকো ফার্মা অ্যান্টিঅ্যারিথমিক ড্রাগ ফ্লেকাইনাইড অ্যাসিটেট (৫০, ১০০ এবং ১৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট) এবং পেশী শিথিলকারী ওষুধ ব্যাক্লোফেন (১০ এবং ২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট) এর জন্য ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (USFDA) এর অনুমোদন পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ফার্মা শিল্প মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রণী অবস্থানে রয়েছে এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
সমস্ত মহামারী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানিও ২৫ শতাংশ বেড়ে $১৬৯ মিলিয়ন হয়েছে।
বেক্সিমকো ফার্মার ২০১৮ সালে নুভিস্তা ফার্মা লিমিটেডের ৮৫.২২ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। ২০২১ সালে সানোফি গ্রুপের সাবসিডিয়ারি সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডে (এসবিএল) সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদারিত্ব (৫৪.৬ শতাংশ) অধিগ্রহণ করেছে।
চলতি অর্থবছরে বেক্সিমকো ফার্মা সানোফি ফার্মার উন্নতির দিকে নজর দেবে।
নাজমুল হাসান বলেন, ‘সানোফি বাংলাদেশের অধিগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ যা বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিও এবং প্রসারিত বাজারের মাধ্যমে আমাদের বাজারের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের মূল অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম হলো সানোফির ব্যবসা পুনর্গঠন করা এবং এর টেকসই প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করা।’
কোম্পানিটি ইউনিট-৩ এর উপরও জোর দেবে এবং ইউনিটটি সম্পূর্ণ চালু হলে কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বেক্সিমকো ফার্মার চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের ব্যবসা প্রবৃদ্ধির গতি শক্তিশালী করতে ইউনিট-৩ উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, প্রকল্পটি প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে এবং কিছু উৎপাদন লাইন এখন বৈধতার ব্যাচ তৈরি করছে, বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে বৈধতাকরণ ও পণ্য স্থানান্তরের পর চালু হবে।
‘এইউনিট-৩ সম্পূর্ণরূপে চালু হলে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে, আমাদের উৎপাদন সীমাবদ্ধতাগুলিকে সহজ করবে এবং আমাদের ভবিষ্যতের বৃদ্ধিকে সুরক্ষিত করবে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য সরকার এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে ভ্যাকসিন বিতরণ ফি হিসাবে কোম্পানিটি ৫৪.২ কোটি টাকা আয় করেছে।
বেক্সিমকো ফার্মা বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে (এআইএম) তালিকাভুক্ত।
কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২১ অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৩৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আলোচ্য অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা।
আগের অর্থবছরে কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। ওই বছর শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ৭ টাকা ৮৮ পয়সা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২১) কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৩ টাকা ২৮ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৪১ পয়সা।
সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০৬ টাকা ১০ পয়সায়। সেই হিসাবে এর পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১৫.৭১ পয়েন্টে।