শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর অপেক্ষায় থাকা বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কোম্পানির শেয়ার বিতরনে বড় ভুল করেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। আনুপাতিক হারে বিতরন করতে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ শেয়ারের গরমিল করে ফেলেছে। এই গরমিলের ফলে এক ক্যাটাগরির শেয়ার অন্য ক্যাটাগরির বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন। এতে কপাল পুড়েছে সাধারন বিনিয়োগকারীদের।
আগে ইস্যু ম্যানেজারদের তত্ত্বাবধানে লটারির মাধ্যমে শেয়ার বিতরনের কাজটি করা হয়ে থাকলেও সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে আনুপাতিক হারে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে লটারির পরিবর্তে ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম (ইএসএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় কোম্পানিতেই (বারাকা পতেঙ্গা) গরিমল করে ফেলল ডিএসই।
বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কমিশন কখনোই চাইবে না এক ক্যাটাগরির জন্য বরাদ্দকৃত শেয়ার অন্য ক্যাটাগরির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরন করা হোক।
বিএসইসির প্রদত্ত সম্মতিপত্র (কনসেন্ট লেটার) অনুযায়ি, বারাকা পতেঙ্গা কোম্পানি মোট ইস্যু করবে ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ৪৮৮টি শেয়ার। এরমধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারী বা বিডারদের (ইআই) ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৮৮টি। বাকি ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ার বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে (ইআই ব্যতিত) নিয়ম অনুযায়ি ভাগ করে দিতে হবে। সেটাও বিএসইসি কনসেন্ট লেটারে ঠিক করে দিয়েছে।
আইপিওর ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ারের মধ্যে প্রবাসি বিনিয়োগকারীদের ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার শেয়ার দিতে বলা হয়েছে। যা কোম্পানির পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে ডিএসইর ইএসএস ওয়েবসাইটে এবং প্রসপেক্টাসে প্রকাশও করা হয়। এরপরে বাকি থাকে ক্ষতিগ্রস্থসহ সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য ২ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার ২০০টি।
ওই ২ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার ২০০টি শেয়ারের উপরে ২০ শতাংশ হারে ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারী কোটায় শেয়ার বরাদ্দ দেওয়ার জন্য কনসেন্ট লেটারে বলা হয়েছে। যার আলোকে বারাকা পতেঙ্গা কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের (২৯৫০৮২০০*২০%) এই হিসাবে ৫৯ লাখ ১ হাজার ৬৪০টি শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে নোটিশ প্রকাশ করে। যা ডিএসইর ইএসএস ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।
এরফলে আইপিওর ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ারের মধ্যে প্রবাসি ও ক্ষতিগ্রস্থ কোটায় বরাদ্দ শেষে সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৫৬০টি শেয়ার।
কিন্তু ডিএসই কর্তৃপক্ষ ভুলে করে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কোটায় শেয়ার বরাদ্দ কমিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রবাসিদের মধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারন বিনিয়োগকারীদের ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি শেয়ার কমিয়ে ২ কোটি ২১ লাখ ৩১ হাজার ১০৪টি শেয়ার দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্থ কোটায় ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪০৮টি বাড়িয়ে ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮টি এবং প্রবাসি কোটায় ৪৮টি বাড়িয়ে ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮টি শেয়ার দেওয়া হয়েছে।
ডিএসইর এই ভুলের কারনে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ৫৮টির পরিবর্তে ৫৪টি করে শেয়ার পেয়েছেন। আর ক্ষতিগ্রস্থ কোটায় বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৭৭টির জায়গায় ৯৭টি করে। এতে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ৪টি করে কম পেয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ কোটার বিনিয়োগকারীরা ২০টি করে বেশি পেয়েছেন।
এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারি বলেন, বারাকা পতেঙ্গার শেয়ার বিতরনে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার (সিওও) নেতৃত্বে একটি দল কাজ করছে। যদি কোন ধরনের ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তা সংশোধন করা হবে।