দুর্বল পারফর্মেন্স, নেই সন্তোষজন ডিভিডেন্ড, ধারাবাহিক লোকসান ও ঝুুঁকিপূর্ণ সত্বেও সপ্তাহজুড়ে দাপট দেখিয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৬ কোম্পানি। এগুলো হলো- অলিম্পিক এক্সেসরিজ, কে অ্যান্ড কিউ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, এটলাস বাংলাদেশ এবং ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। গত সপ্তাহে দরবাড়ার ১০ কোম্পানির মধ্যে এই ৬টি কোম্পানি জায়গা করে নিয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, এ কোম্পানিগুলোর বর্তমান পারর্ফন্স খুব একটা সন্তোষজন নয়। পিই রেশিও বিবেচনায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি পুঁঞ্জিভুত লোকসানসহ প্রান্তিকে প্রতিবেদনেও ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। এসব কোম্পানি সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের জন্য বিগত বছরগুলোতে ভালো ডিভিডেন্ড দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। এরপরেও কি কারণে কোম্পানিগুলোর দর বেড়েছে গেইনার তালিকায় ওঠে আসা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর পেছনে একটি চক্র কলকাঠি নাড়ছে বলে ধারণা করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।
অলিম্পিক এক্সেসরিজ : সাপ্তাহিক গেইনার তালিকার শীর্ষে অবস্থান করা কোম্পানি অলিম্পিক এক্সেসরিজের সপ্তাহজুড়ে দর বেড়েছে ৪৪.৬৬ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানির মোট ২৫ কোটি ৭৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ টাকা।
২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ২৫০ কোটি টাকা ও ১৬৯ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
গত ৩টি প্রান্তিকে কোম্পানিটি ধারারবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান প্রথম প্রান্তিকে ৮ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৩ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ১২ পয়সা। লোকসান থাকায় কোম্পানিটির পিই রেশিও নেই এবং অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১৩ টাকা ৬৪ পয়সা। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। গত ৮ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
কে অ্যান্ড কিউ : সাপ্তাহিক গেইনার তালিকার ৩ নম্বরে করা কোম্পানি কে অ্যান্ড কিউ এর সপ্তাহজুড়ে দর বেড়েছে ২৪.৫০ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানির মোট ৬ কোটি ৯২ লাখ ২৯ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ ৭ হাজার ২৫০ টাকা।
১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ১০০ কোটি টাকা ও ৪ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
গত ৩টি প্রান্তিকে কোম্পানিটি ধারারবাহিকভাবে আয় দেখিয়েছে। এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় প্রথম প্রান্তিকে ৭ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৮ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৪৫ পয়সা। কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও নেই ২৮০.৭৫ পয়ন্ট, যা বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ৭৬ টাকা ৯৯ পয়সা। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ২২৪ টাকা ৬০ পয়সা। গত ৪ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৪৪ টাকা ২০ পয়সা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২০ সালে ৪ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং : সাপ্তাহিক গেইনার তালিকার ৫ নম্বরে অবস্থান করা কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সপ্তাহজুড়ে দর বেড়েছে ১৮.৮৭ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানির মোট ৭ কোটি ১৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার ২৫০ টাকা।
২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া আর্থিক খাতের কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ৩০০ কোটি টাকা ও ২২১ কোটি ৮১ লাখ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
২০২১ পর্যন্ত কোম্পানিটির কোন বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ অর্থবছরে ৩টি প্রান্তিকে কোম্পানিটি ধারারবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান প্রথম প্রান্তিকে ৪ টাকা ৪২ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ টাকা ৯৬ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৪ টাকা। লোকসান থাকায় কোম্পানিটির পিই রেশিও নেই এবং অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য লোকসান ১২১ টাকা ২ পয়সা। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১৪ টাকা ৩০ পয়সা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং : সাপ্তাহিক গেইনার তালিকার ৬ নম্বরে অবস্থান করা কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের সপ্তাহজুড়ে দর বেড়েছে ১৮.৫২ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানির মোট ১৭ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পেপার ও প্রিন্টিং খাতের কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ১০০ কোটি টাকা ও ৭৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
গত ৩টি প্রান্তিকে কোম্পানিটি ধারারবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান প্রথম প্রান্তিকে ৮ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৪ পয়সা। লোকসান থাকায় কোম্পানিটির পিই রেশিও নেই এবং অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ৯ টাকা ৭৪ পয়সা। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১৬ টাকা। গত ৩ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৩ টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৯ সালে ০.২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
এটলাস বাংলাদেশ : সাপ্তাহিক গেইনার তালিকার ৭ নম্বরে অবস্থান করা কোম্পানি এটলাস বাংলাদেশের সপ্তাহজুড়ে দর বেড়েছে ১৫.০৯ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানির মোট ৩ কোটি ২১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮০ লাখ ৩২ হাজার ২৫০ টাকা।
১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ১০০ কোটি টাকা ও ৩৩ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৩৮৬ কোটি ৩ লাখ টাকা।
গত ৩টি প্রান্তিকে কোম্পানিটি ধারারবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান প্রথম প্রান্তিকে ৫২ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৯৪ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৬৪ পয়সা। লোকসান থাকায় কোম্পানিটির পিই রেশিও নেই এবং অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১২৯ টাকা। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১২৫ টাকা ১০ পয়সা। গত ৩ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ২০ টাকা ৭০ পয়সা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২০সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
ফাস ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট : সাপ্তাহিক গেইনার তালিকার ৮ নম্বরে অবস্থান করা কোম্পানি ফাস ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্টের সপ্তাহজুড়ে দর বেড়েছে ১৪.০৪ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানির মোট ৮ কোটি ৩১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ৭৯ হাজার ২৫০ টাকা।
২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ২২০ কোটি টাকা ও ১৪৯ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ১২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
গত ৩টি প্রান্তিকে কোম্পানিটি ধারারবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান প্রথম প্রান্তিকে ৩ টাকা ২৬ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ টাকা ৬২ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ২ টাকা ৬৬ পয়সা। লোকসান থাকায় কোম্পানিটির পিই রেশিও নেই এবং অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য লোকসান ৬ টাকা ৬১ পয়সা। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৬ টাকা ৫০ পয়সা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।