সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সোমবার (২৮ জুন) থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন কার্যকর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে ৭ দিনের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর হবে। এ সময়ে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে বলে এক ঘোষণায় জানিয়েছে সরকার। তবে যেহেতু চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হচ্ছে, তাই এ জরুরি পরিস্থিতিতেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ হিসাব সংক্রান্ত কিছু অফিস সীমিত পরিসরে সরকার খোলা রাখবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংক খোলা থাকলে সীমিত পরিসরে হলেও দেশের শেয়ারবাজার খোলা থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের অভিমত, যেহেতু চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হচ্ছে, তাই কর সংগ্রহ সংক্রান্ত অনেক কাজ বাকি রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বা অ-তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির অর্থবছরের জুন ক্লোজিং রয়েছে। তাই কোম্পানিগুলোর অর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ওই প্রতিবেদন বিভিন্ন রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানে দাখিল জমা দিতে হবে। এ সবকিছু মিলিয়ে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা থাকবে। আর ব্যাংকিং কার্যক্রম চললে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রাখা যাবে। তাই এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, কঠোর লকডাউনের মধ্যে ব্যাংক খোলা রাখা বা না রাখার বিষয়ে রোববার (২৭ জুন) দুপুরে ডেপুটি গভর্নরদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। লকডাউন সংক্রান্ত সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পরই ব্যাংক খোলার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে কঠোর লকডাউনের মধ্যে ব্যাংক খোলা রাখা হলে, সব ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন সে বিষয়ে দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অর্থ বছর শেষ পর্যায়ে, তাই এনবিঅরের কর সংগ্রহের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির জুন ক্লোজিং। তাই এ সংক্রান্ত অর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হয় কোম্পানিগুলোকে, যা বিভিন্ন রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হয়। আমি মনে করি, সর্বাত্মক লকডাউনেও সরকার এ পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখার অনুমতি দেবে। আর ব্যাংক খোলা থাকলে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সীমিত পরিসরে শেয়ারবাজারে লেনদেন চলবে। তাই এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। অযথাই আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের মধ্যেও ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখেতে হবে, সেটা সীমিত পরিসরেও হলেও। কারণ ব্যাংক বন্ধ থাকলে কেবলমাত্র ব্যক্তি গ্রাহকই অসুবিধার সম্মুখীন হবেন না, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর ব্যাংকিং কার্যক্রম খোলা থাকলে দেশের শেয়ারবাজার সীমিত পরিসরে খোলা রাখা উচিত হবে। কারণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন ঘরে বসেই লেনদেন করতে পারেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু দেখছি না। কারণ অর্থবছর শেষ হওয়ার পথে। ফলে এনবিআরের কর সংগ্রহের বিষয় রয়েছে। আর গার্মেন্টস শিল্প খোলা রাখা হবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। তাই স্বাভাবিক কারণেই ব্যাংক খোলা রাখা হবে বলে ইঙ্গিত পাচ্ছি। আর ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজার খোলা থাকবে। সম্প্রতি করোনার পরিস্থিতিতেও শেয়ারবাজারে বিভিন্ন রেকর্ড গড়তে লক্ষ্য করা গেছে। তাই আশা করি, কঠোর লকডাউনে শেয়ারবাজার ইতিবাচক থাকবে। এজন্য বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে।’
এদিকে, কঠোর লকডাউনের মধ্যে ব্যাংক খোলা রাখা হবে কি-না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনে ব্যাংক খোলা থাকবে কি-না তা সরকারের প্রজ্ঞাপন জারি করার পর সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
প্রসঙ্গত, শনিবার (২৬ জুন) অর্থবছর শেষ হওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও হিসাব সংক্রান্ত কিছু অফিস সীমিত পরিসরে খোলা রাখা হবে বলে জানিছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।