বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বিএসইসির এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছে কোম্পানিটির সাবেক পর্ষদ। এ পরিস্থিতিতে পর্ষদ পুনর্গঠন সংক্রান্ত আইনি জটিলতা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটির অফিসসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি বিএসইসির এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বরাবর পাঠোনো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
১৬৪ কোটি ৬ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ফারইস্ট ফাইন্যান্স মন্দ ঋণ ও লোকসানের ভারে নিমজ্জিত। কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৪১.৮৮ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৫৮.১২ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে। তারপরও কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ২০১৭ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিচ্ছেন না। ফলে, কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়েছে, যা এখনও বহাল আছে। এর পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। কোম্পানিটির এ পরিস্থিতির জন্য সাবেক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যর্থতা দায়ী বলে দাবি বিএসইসির। একই সঙ্গে বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকারক ও অপ্রত্যাশিত বলে মনে করছে কমিশন।
এদিকে, বিএসইসি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে চলতি বছরের ২৯ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম ভরসার নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদকে বিলুপ্ত করে সোনালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুলকে চেয়ারম্যান করে ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় কমিশন।
তবে কমিশনের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ১৩ এপ্রিল উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন (পিটিশ নম্বর- ৪২৮৮/২০২১) দায়ের করে সামসুল ইসলাম ভরসার নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ। রিটের শুনানি শেষে স্থিতাবস্থা আদেশসহ রুল দিয়েছেন। এছাড়া, এর বাইরে কেন কমিশনের আদেশটি বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে শুনানির জন্য রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত।
ফলে বিএসইসির আদেশকে বাতিল হয়নি, বরং পুনর্গঠিত পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ায় তা বহাল আছে বলে মনে করে বিএসইসি।
এদিকে, উচ্চ আদালতের ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সামসুল ইসলাম ভরসার নেতৃত্বাধীন পর্ষদ গত ১৫ এপ্রিল লকডাউনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় দখলে নিয়েছেন। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অফিস নথিও সরিয়ে নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জারিয়াব।
এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণের জন্য ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের অফিসসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছে বিএসইসি।
এরই ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নের লক্ষ্যে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে কোম্পানির অফিসসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করেছে বিএসইসি। যতদিন পর্যন্ত পর্ষদ সংক্রান্ত আইনি জটিলতা সমাধান না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার কথা বিবেচনা করে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের অফিস বন্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো নির্দেশনা আসনি। নির্দেশনা পেলে পরে জানাবো।’
তবে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের কোম্পানি সচিব নাজমুন নাহার বলেন, ‘দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে।’
প্রসঙ্গত, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদে বিএসইসি কর্তৃক মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকেরা হলেন—সোনালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল মকবুল, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এএমডি এহসানুল আজিজ, কিংসনিউজ২৪.কমের প্রধান সম্পাদক শেখ নাজমুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সজিব হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্সির পরিচালক মোশাররফ হোসাইন ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট একেএম শহিদুজ্জামান। এছাড়া, পুনর্গঠিত পর্ষদে থাকবেন সামসুল ইসলাম ভরসা, খাদিজা ওয়াহিদা জাহান ও রিমসা বিডির মনোনীত পরিচালক আশাদুজ্জামান।