মহামারিকালে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা গত বছরের তুলনায় বেশ কম হলেও এখন পর্যন্ত যে তিনটি ব্যাংক লভ্যাংশ করেছে, তাতে কোনো ব্যাংকের চূড়ান্ত মুনাফা করতে দেখা যায়নি। ডাচবাংলা ব্যাংক গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৫ শতাংশ বেশি মুনাফা করেছে। আর মার্কেন্টাইলের মুনাফা আগের বছরের সমান হয়েছে। যদিও ব্যাংক তিনটির পরিচালন মুনাফা যথাক্রমে ৮, ৩৩ ও ৪০ শতাংশ কম ছিল।
শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ আর প্রতি ২০টি শেয়ারে একটি করে বোনাস শেয়ারের ঘোষণায় বাড়ল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর।
এই খাতের ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টিরই দর বেড়েছে। অপরিবরর্তিত আছে ছয়টির দর। আর মূল্য হারিয়েছে ১০টির শেয়ার দর।
একটি খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির দর বৃদ্ধিই সমপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ইতিবাচক খবর বলা যায় এই কারণে যে, সূচকের বড় পতন দেখেছে বিনিয়োগকারীরা।
বাজারে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৫টির, কমেছে দ্বিগুণেরও বেশি, ১৭২টি। আর অবরিবর্তিত ১০৪টি।
সূচকের পতন হয়েছে ৪৯ পয়েন্ট। কমেছে লেনদেন। সব মিলিয়ে হতাশা নিয়ে শুরু হলো সপ্তাহ।
টানা দ্বিতীয় দিনের মধ্যে পতন হয়েছে বহুজাতিক ও দামি শেয়ারের। নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া লুব রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের লেনদেনের চতুর্থ দিনে সর্বোচ্চ দর হারিয়ে স্থান পেয়েছে পতন হওয়া শীর্ষ কোম্পানির তালিকায়।
ব্যাংকের শেয়ারের চিত্র
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের আর্থ বছর শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে। ফলে ২০২০ সালের জন্য বাংকগুলো তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। ইতোমধ্যে তিনটি ব্যাংক তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ডাচ বাংলা ব্যাংক, শাহজালালা ইসলামী ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
সর্বশেষ লভ্যাংশ ঘোষণা করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত এক মাসের ব্যাংকটির সর্বোচ্চ দর ছিল ১২ টাকা ৮০ পয়সা। লভ্যাংশর্ ঘোষণার আগে দর কমেছে ১২ টাকা ৪০ পয়সায় নামলেও পরবর্তীতে দর বেড়েছে প্রায় ১ টাকা।
রোববার দিন শেষে ব্যাংকটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা, যা আগের দিনের তুলনায় ৫০ পয়সা বেশি। এদিন ব্যাংকটির ৫৬ লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অপর দুই ব্যাংকের মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ারদরে উত্থান-পতন থাকলেও দিন শেষে দর না পাল্টিয়ে ৬৬ টাকা ৯০ পয়সাই ছিল। আর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদরে কমেছে ২০ পয়সা। সারা দিনের লেনদেনে ২০ টাকা ২০ পয়সা থেকে দর কমে হয়েছে ২১ টাকা।
আরও পড়ুন…আরও দর হারাল বহুজাতিক কোম্পানি
দাম বেড়েছে আল আরাফাহ, ফার্স্ট ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এসআইবিএল, সাউথইস্ট ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকের ১ টাকা ২০ পয়সা।
মহামারিকালে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা গত বছরের তুলনায় বেশ কম হলেও এখন পর্যন্ত যে তিনটি ব্যাংক লভ্যাংশ করেছে, তাতে কোনো ব্যাংকের চূড়ান্ত মুনাফা করতে দেখা যায়নি।
ডাচবাংলা ব্যাংক গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৫ শতাংশ বেশি মুনাফা করেছে। আর মার্কেন্টাইলের মুনাফা আগের বছরের সমান হয়েছে। যদিও ব্যাংক তিনটির পরিচালন মুনাফা যথাক্রমে ৮, ৩৩ ও ৪০ শতাংশ কম ছিল।
আরও পড়ুন…আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। কিন্তু ব্যাংকগুলোর শেয়ারদরের খুব বেশি পরিবর্তন না থাকায় সেগুলোর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়নি। তবে বছরের এই সময়টিতে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি আগ্রহ থাকে বেশি।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনটি ব্যাংক লভ্যাংশ প্রদান করেছে। সবগুলোই ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। তবে সে তুলনায় আগ্রহ এখনও কম। এ ছাড়া করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলোর ব্যবসা ভালো হওয়ায় আরও বেশি লভ্যাংশ দিতে পারত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে সেটি হচ্ছে না। আমি মনে করি, এটি দ্রুত সমাধান করা উচিত।’
ব্যাংক খাতের অর্ধেক কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লেও বড় পতন হয়েছে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাত ও বিমার শেয়ারে।
বিমা খাতের তালিকাভুক্ত ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৩৪টি, দর ধরে রেখেছে চারটি আর বেড়েছে ১১টির দর।
আরও পড়ুন…ব্লক মার্কেটে বিদ্যুৎ খাতের দুই কোম্পানির বড় লেনদেন
আর্থিক খাতের ২২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে একটির, দর ধরে রেখেছে তিনটির আর পতন হয়েছে বাকি ১৮টির।
সূচক ও লেনদেন
রোববার ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৯ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫১৯ পয়েন্ট। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ৭ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৭ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২৮ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৬ পয়েন্টে।
মোট লেনদেন হয়েছে ৬২২ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৮০৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৮৭ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৩৬ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৭ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৩৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ১২৫টির ও পাল্টায়নি ৫৪টির। মোট লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন…
লভ্যাংশ ঘোষণার তারিখ জানিয়েছে ৫ কোম্পানি
বড় হতাশা দিয়ে সপ্তাহ শুরু
ডিসেম্বর ক্লোজিং ১১২ কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় বিনিয়োগকারীরা
বড় অঙ্কের বোনাস ঘোষণার পরও দাম ধরে রাখতে পেরেছে
চার কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা ১৬৪ কোটি টাকা
মুনাফায় বড় ঊর্ধ্বগতি থাকলেও লভ্যাংশে প্রভাব নেই
বেশি বোনাসে ব্যাপক লোকসান যেসব কোম্পানিতে
জেমিনি সি ফুডে বিনিয়োগ করে কপালে হাত
বেশি বোনাসের করুণ ফল