1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

পারিবারিক যোগসাজশে ৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০২১

একই পরিবারের চারটি কোম্পানি এসএম সাকিল আখতার, এহসান সোয়েটারস লিমিটেড, এহসান ফ্যাশন্স লিমিটেড ও হট ড্রেস লিমিটেড। সব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন একই পরিবারের আটজন। সম্পর্কে একে অপরের বড় ভাই, ছোট ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী। প্রতিটি কোম্পানিই আবার বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের গ্রাহক। এক কোম্পানি ঋণ নিলে অন্য কোম্পানি জামিনদার হয়ে আসছে শুরু থেকেই।

হঠাৎ করে বড় ভাই সাকিল আখতারের কোম্পানির জামিনদার নন বলে দাবি করছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যবসার অবস্থা খারাপ দেখিয়ে সাকিল আখতারের লোন অ্যাকাউন্টে আর কোনো টাকা না কাটার জন্য ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন অপর কোম্পানির মালিকেরা। কিন্তু বড় ভাইয়ের ঋণের করপোরেট গ্যারান্টার তারা কখনোই ছিলেন না, এমন দাবি ১২ বছর পরে কেন? এত দিন তারা কোথায় ছিলেন কোম্পানিগুলোর কাছে এ প্রশ্নের কোনো জবাব পায়নি ব্যাংক।

সূত্র জানায়, ঋণখেলাপি বড় ভাই সাকিল আখতার এখন কানাডা প্রবাসী। ব্যাংকের ঋণও পরিশোধ করছেন না তিনি। করপোরেট গ্যারান্টাররাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ পর্যায়ে ব্যাংকের এসব ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পারিবারিক সূত্র ধরে অর্থ পাচারের আশঙ্কাও রয়েছে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মেসার্স এসএম সাকিল আখতার সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ২০০৪ সালের ২৮ জুন ভোগ্যপণ্য আমদানি এবং বিক্রির জন্য তিন ধরনের ঋণের (ওডি, এলসি, এলটিআর) আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২১ জুলাই দুই কোটি টাকার ওডি, ২০ কোটি টাকার এলসি ও ১৬ কোটি টাকার এলটিআর (মোট ৩৯ কোটি

টাকা) ঋণ মঞ্জুর করে ব্যাংক। মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুসারে সাকিল আখতারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ‘এহসান সোয়েটারস লিমিটেড’ ও ‘এহসান ফ্যাশন্স লিমিটেড’-এর করপোরেট গ্যারাণ্টি প্রদান করে, যা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদীত। পরে দুবার (২১ জুলাই ২০০৫ ও ৬ আগস্ট ২০০৬) সাকিল আখতারের আবেদনের ভিত্তিতে ঋণ সুবিধাগুলো নবায়ন করা হয়। সেই সময়েও সাকিল আখতারের ঋণের জামিনদাতা হিসেবে এহসান সোয়েটারস ও এহসান ফ্যাশন্স লিমিটেড করপোরেট গ্যারান্টার হিসেবে বলবৎ ছিল।

ব্যাংক জানায়, আমদানি করা মালামাল বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও গ্রাহক তা জমা করেননি। আমদানি করা সব মালামাল বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ অবস্থায় গ্রাহক সাকিল আখতার নিয়মিত টাকা পরিশোধ না করায় বিভিন্ন সময়ে মোট সাতবার (এক বছরের মধ্যে) তাগাদাপত্র ইস্যু করলেও ব্যাংকের কোনো টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। এতকিছুর পর টাকা পরিশোধ না করায় ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিস দেয় ব্যাংক। তারপরও কোনো টাকা পরিশোধ করেননি সাকিল আখতার। বাধ্য হয়ে ২০০৮ সালের ৩০ এপ্রিল সুদসহ মোট ২০ কোটি ৪৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৯ টাকা ৪৪ পয়সা আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ব্যাংক। ২০০৮ সালের ১৪ আগস্ট আদালত ব্যাংকের অনুকূলে রায় ও ডিক্রি প্রদান করে।

এদিকে ২০০৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ ঋণ সাত বছরের জন্য পুনঃতফসিল করেন এসএম সাকিল আখতার, যা ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর আবারও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। পুনঃতফসিলের সময় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘এহসান সোয়েটারস লিমিটেড’ এবং ‘এহসান ফ্যাশন্স লিমিটেড’-এর পাশাপাশি অপর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘হট ড্রেস লিমিটেড’ করপোরেট গ্যারান্টি প্রদান করে।

পুনঃতফসিলীকরণের পর ২০০৮ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন তহবিল থেকে মোট ৯ কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার টাকা শোধ করেন শাকিল আকতার। এর মধ্যে সাকিল আখতার নিজ তহবিল থেকে দুই কোটি সাত লাখ ৩৮ হাজার, এহসান স্যুয়েটার লিমিটেড থেকে ৬৪ লাখ ৯৭ হাজার ও হটড্রেস লিমিটেড থেকে ছয় কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা জমা দেন।

সাউথইস্ট ব্যাংকের রিকভারি ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাকিল আখতারের জন্য নিজেদের হিসাব থেকে টাকা না কাটার অনুরোধ জানায় এহসান ফ্যাশন্স ও হট ড্রেস লিমিটেড। এখানেই মূল প্রশ্ন, ব্যাংক যদি অনিয়ম করে থাকে তাহলে মামলা না করে কেন অনুরোধ করলেন গ্রাহক? এখন তারা দাবি করছেন করপোরেট গ্যারান্টার হিসেবে সিল ও স্বাক্ষর নকল করেছেন তাদের বড় ভাই সাকিল আখতার। তাহলে ১২ বছর কোথায় ছিলেন তারা?

ব্যাংক সূত্রে আরও জানা যায়, এসএম সাকিল আখতারের দাখিল করা করপোরেট গ্যারান্টির শর্তাবলি ভঙ্গের কারণে হটড্রেস লিমিটেড, এহসান ফ্যাশন্স লিমিটেড, এহসান স্যুয়েটার লিমিটেড এবং প্রতিষ্ঠান তিনটির সব পরিচালকদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে ব্যাংক। সেই মামলায় এক দিন পর এসএম সারোয়ার আলম (শাকিল আখতারের ছোট ভাই) এবং তার স্ত্রী মিসেস সাবিনা আলমকে গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানার পুলিশ। জামিনে এখন বাইরে আছেন তারা। উভয়পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে পাঠান আদালত। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য ধার্য আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এহসান সোয়েটারস, এহসান ফ্যাশন্স ও হট ড্রেস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে যারা রয়েছেন, তারা হলেন তিনটি প্রতিষ্ঠানেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হাকিম সরকার, পরিচালক সখিনা খাতুন (সাকিল আখতারের স্ত্রী), জেসমিন আরা মিলি, সারোয়ার আলম, সাবিনা আলম, হট ড্রেস লিমিটেডের পরিচালক শাজাহান হানিফ, মোহাম্মদ এনামুল হক এবং এহসান সোয়েটারস ও এহসান ফ্যাশন্স লিমিটেডের পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন বলেন, একসময় তারা একই সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। এখন সাকিল আখতার বিদেশে চলে যাওয়ায় জামিনদার হতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন একসময়কার সহকর্মীরা। বিষয়টি আদালতে তদন্তাধীন রয়েছে। এখন আদালতের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তা পরিপালন করা হবে।

সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার ম্যানেজার মো. গোলাম আজম ফারুক বলেন, এতদিন তারা টাকা দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করার ফন্দি এঁটেছে। সিল-স্বাক্ষর নকলের দাবি জানাচ্ছে, যা একেবারেই ভিত্তিহীন। সাকিল আখতার দেশে থাকা অবস্থায় ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে যখন ব্যাংকের কয়েকটা কিস্তি পরিশোধ করেছেন, তখন তারা কোথায় ছিলেন?

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য তিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হাকিম সরকারের সঙ্গে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করলে প্রশ্ন দেখেও (সিন করে) উত্তর দেননি তিনি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ