বিডিংয়ে (নিলাম) কোম্পানির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারনে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের (ইআই) যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
সোমবার (০৮ মার্চ) আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে ইস্যু ম্যানেজারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘রোল অব ইস্যু ম্যানেজারস আইপিও অ্যাপ্লিকেশন’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি এই প্রশ্ন তুলেছেন। এতে সভাপতিত্ত্ব করেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। আর স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো: ছায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, একটি কোম্পানির বিডিংয়ে সব যোগ্য বিনিয়োগকারী ৩২ টাকা করে দর প্রস্তাব করলেন। দু-একজন আবার ৩৮ টাকাও দর প্রস্তাব করেছেন। অথচ শেয়ারবাজারে ওই কোম্পানির হোল্ডিং কোম্পানির শেয়ার ২৫-২৭ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে হোল্ডিং কোম্পানির শেয়ার ২৫-২৭ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে ওই কোম্পানিতে কেনো এতো দরে প্রস্তাব করা হলো, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
মূল প্রবন্ধে রেজাউল করিম আইপিওতে আবেদনে আর্থিক হিসাব যথাযথভাবে উপস্থাপনের জন্য ইস্যু ম্যানেজারদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। এতে তিনি আর্থিক হিসাবে অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখানোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাই সেসব ক্ষেত্রে তিনি ইস্যু ম্যানেজারদেরকে সচেতন হওয়ার জন্য বলেন।
তিনি বলেন, আইপিওতে আসার আগে অনেক কোম্পানি কৃত্রিম বিক্রি দেখায়। এর সঙ্গে দেনাদারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এভাবে মুনাফা বাড়িয়ে দেখালেও অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো আবার নেগেটিভও দেখা যায়। যাতে করে বোঝা যায় কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা। এছাড়া অবচয় ও বিভিন্ন ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বেশি করে দেখানো হয়। অনেক সময় মজুদ পণ্যও বেশি করে দেখানো হয়। এসব বিষয়গুলো ইস্যু ম্যানেজারদেরকে ভালোভাবে যাচাই করার পরামর্শ দেন তিনি।
এসময় তিনি আইপিও আবেদনের সময় সঠিক তথ্য ও আপডেট প্রমাণাদি দাখিলের জন্য অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে শেয়ারবাজারে আসার ক্ষেত্রে একটি কোম্পানির কি সুবিধা আছে, তা শুরুতেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মধ্যে তুলে ধরার অনুরোধ করেন। এবং শুরুতে বিভিন্ন নিয়ম কানুনের কথা বলে ভয় না দেখানোর জন্য বলেন।
তিনি বলেন, একটি কোম্পানি ৭ কোটি টাকার জমি দেখায়, সেই কোম্পানিই আবার ওই জমির উন্নয়নে ৪০ কোটি টাকা দেখায়। সম্পদ বেশি করে দেখানোর জন্য এমনটি করা হয়। যা সরেজমিনে যাচাইয়ে প্রকৃত অবস্থা বেরিয়ে আসবে। তাই ইস্যু ম্যানেজারদেরকে এই বিষয়টি যাচাই করে নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
অন্যদিকে জমি উন্নয়নবাবদ অনেক সম্পদ দেখানো হলেও তার অবচয় চার্জ করে না বলে জানান রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ৭ কোটি টাকার জমিতে ৪০ কোটি টাকার মাটি ভরাটবাবদ ব্যয় হবে না। তাহলে নিশ্চয় রড, ইটের ব্যবহার হয়েছে। এক্ষেত্রে এসব সম্পদ অবচয়যোগ্য। কিন্তু তা না করে মুনাফা বাড়িয়ে দেখায়।
এছাড়া অনেক কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কৃত্রিম কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা দেখায় বলে জানান বিএসইসির এই মূখপাত্র। তিনি বলেন, কোম্পানির আর্থিক হিসাবে প্রদত্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে বেতনাদিবাবদ ব্যয়কে তাদের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলেই তা বোঝা যায়। অনেক কোম্পানিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে গড় মাসিক ব্যয় ৫ হাজার টাকাও হয়ে যায়। যা কখনোই সম্ভব না। তাই আমাদেরকে ওই কোম্পানির আইপিও আবেদন সঙ্গেসঙ্গে বাতিল করে দিতে হয়।
তিনি বলেন, আইপিও দেরী হয় বলে অনেকে কমিশনকে দোষারোপ করে। অথচ ইস্যু ম্যানেজাররা বিএসইসির কোয়ারির জবাব দিতে বিলম্ব করে। তাই তাদেরকে যথাসময়ে জবাব দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।