বহুজাতিক কোম্পানি বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ লিমিটেড –বিএটিবিসি লভ্যাংশ যারা নিয়েছেন, তারা ব্যাপক মুনাফা পেয়েছেন।
রেকর্ড ডেটে বন্ধ থাকার পর মূল্য সমন্বয় শেষে শেয়ারটির দাম বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। আবার যত শেয়ার কেনার চাহিদা ছিল, বিক্রেতাও ছিল না তত।
প্রতিষ্ঠানটি এবার একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি করে বোনাস শেয়ার আর শেয়ার প্রতি ৬০ টাকা করে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে ৩০ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ আর বাকি ৩০ টাকা চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
যারা এই লভ্যাংশ নিতে যান, তাদের শেয়ার কেনার শেষ সুযোগ ছিল মঙ্গলবার। বুধবার লেনদেন ছিল বন্ধ।
মঙ্গলবার শেয়ারটির মূল্য ছিল এক হাজার ৫৫৪ টাকা। একটি শেয়ার এখন তিনটি শেয়ার হয়ে যাওয়ায় এই দামের তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫১৮ টাকায় লেনদেন শুরু হয়।
শেয়ারটির দাম বাড়া সম্ভব ছিল ৫৫৬ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই একটি দামেই বিক্রি হয়েছে শেয়ার। হাতবদল হয়েছে মোট তিন লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮টি শেয়ার।
অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা।
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মূল্যপতন ঠেকানে সর্বনিম্ন যে দাম বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়া হয় প্রতিটি শেয়ারের। তখন সিদ্ধান্ত হয় বিএটিবিসির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস হবে ৯০৭ টাকা ৬০ পয়সা।
একটি শেয়ারের বিপরীতে তিনটি শেয়ার হয়ে গেলেও ফ্লোর প্রাইস তিন ভাগের এক ভাগ হয়নি। বরং সিদ্ধান্ত হয়, রেকর্ড ডেটে যে দাম থাকবে, তার সঙ্গে বোনাস শেয়ার সমন্বয় করেই ঠিক হবে নতুন ফ্লোর প্রাইস।
ফলে ৫১৮ টাকার নিচে শেয়ারটি বিক্রি হওয়া সম্ভব ছিল না। আর আগের হিসাবে শেয়ার প্রতি বিনিযোগকারীরা যে ৩০ টাকা করে মুনাফা পাবেন, নতুন হিসাবে তা ধরা যায় ১০ টাকা।
ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণে এই নগদ লভ্যাংশ বিবেচনা করা হয়নি। ফলে এই ১০ টাকা আর ফ্লোর প্রাইসের পরে আরও যে ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা দাম বেড়েছে, সেটিই বিনিয়োগকারীদের মুনাফা।
অর্থাৎ একটি শেয়ারে মুনাফা হয়েছে ৪৮ টাকা ৮০ পয়সা। রেকর্ড ডেটের আগের হিসাবে মুনাফা হয় ১৪৬ টাকা ৮০ পয়সা।
বিএটিবিসি দিয়েই শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় শুরু হলো। এর আগে মুন্নু অ্যাগ্রো ১০ শতাংশ বোনাস আর ন্যাশনাল পলিমার ১০০ শতাংশ অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইট শেয়ার দেয়ার পরও ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুনাফা পেয়ে যান।
মুন্নু এগ্রোর ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা ছিল ৭৯৪ টাকা ৮০ পয়সা। ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয় করা দাম হওয়ার কথা ছিল ৭২০ টাকা। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস এখনও আগের দরেই আছে।
আবার গত ৬ জানুয়ারি রাইট শেয়ারের জন্য ক্লোজিং ডেতে ন্যাশনাল পলিমারের দাম ছিল ৭১ টাকা ৬০ পয়সা। প্রতি ১০ শেয়ারে পাঁচ টাকা প্রিমিয়াম নেয়া হয়েছে। ফলে রাইট শেয়ার যোগ হওয়ার পর মূল্য সমন্বয় হওয়ার কথা ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা।
কিন্তু এই শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা আছে ৫৬ টাকা ৬০ পয়সা। আর এর নিচে দাম নামতে পারছে না।
ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় না হলে বিএটিবিসির শেয়ারধারীরা বিপুল পরিমাণ মুনাফা পেয়ে যেতেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে। কারণ, আগের মতো শেয়ারটির দাম ৯০৭ টাকা ৬০ পয়সার নিচে নামতে না পারলে আগের একটি শেয়ারের বিপরীতে এখন তিনটি শেয়ারের দাম দাঁড়াত দুই হাজার ৭২২ টাকা ৮০ পয়সা।
এ নিয়ে কথা উঠার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানায়, এখন থেকে বোনাস ও রাইট শেয়ারের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন ফ্লোর প্রাইস ঠিক হবে।
বিএটিবিসির ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় যেভাবে হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, বোসান বা রাইটের সঙ্গে বর্তমান ফ্লোর প্রাইসের সমন্বয় হবে না, রেকর্ড ডেটের দামের সঙ্গে সমন্বয় হবে।
বিএটিবিসির যে লভ্যাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি অবশ্য কাগজে কলমে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আগামী ২৭ মার্চ কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে তা চূড়ান্ত হবে।
যেখানে লভ্যাংশ চূড়ান্ত হওয়ার পরে তা বিনিয়োগকারীদের হিসাবে পাঠানো হবে। বোর্ড সভায় ঘোষিত লভ্যাংশ এজিএম-এ কোনো পরিবর্তন হওয়ার নজির খুবই কম।
কোম্পানিটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাম্প্রতিক তুমুল আগ্রহের কারণ, এর ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা।
কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন তিন বছরের মধ্যে নয় গুণ করার পাশাপাশি ব্যবসা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশের বাজার দখলের পরিকল্পনা করেছে তারা। সিগারেট রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে ১৯২ কোটি টাকায় কারখানা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।