সুদবিহীন সুকুক বন্ড ছেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তুলে বেশিরভাগ অংশই দুটি সৌরচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড।
বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি হলো তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেড। এই দুটি কেন্দ্র বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা ও লাঠশালার চরে এক হাজার একর জমির উপর নির্মাণ হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এটিই দেশে এ ধরনের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র।
২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর তিস্তা সোলারের সঙ্গে সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় ও বাস্তবায়ন চুক্তি হয়েছে।
অন্যদিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াটের করতোয়া সোলার লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ শতাংশের মালিক। বাকি ২০ শতাংশ চীনের জিয়াংসু ঝংটিয়ান টেকনোলজি।
এই কেন্দ্র থেকে আগামী ২০ বছর ১৩.৯ টাকা করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে সরকার।
এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সি পাওয়ার। আর এই প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকো লিমিটেড।
তবে সব অর্থই এই দুই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হবে না। বেক্সিমকোর টেক্সটাইলের ব্যবসা সম্প্রসারণেও ব্যয় হবে একটি অংশ।
সম্প্রতি পিপিই শিল্প পার্ক স্থাপনে ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বেক্সিমকো। এখান থেকে বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করার আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এখান থেকে পণ্য কেনার চুক্তি করেছে।
মঙ্গলবার বেক্সিমকোর পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সুকুকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার তা ডিএসই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, সুকুকের অভিহিত মূল্য হবে ১০০ টাকা, বিনিয়োগকারীরা ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। এর জন্য ৫০টি সুকুক পাবেন তারা।
এর মেয়াদ পাঁচ বছর, যা থেকে বিনিয়োগকারীরা কমপক্ষে ৯ শতাংশ মুনাফা পাবেন। তবে বেক্সিমকোর মুনাফা ৯ শতাংশের বেশি হলে তার ১০ শতাংশ সুকুকের মুনাফার সঙ্গে যোগ হবে।
পুঁজিবাজারে বর্তমানে ২২১টি ট্রেজারি বন্ড থাকলেও সেগুলো শেয়ারের মতো লেনদেন হয় না। এগুলো প্রতিটির অভিহিত মূল্য এক লাখ টাকা।
এটাই পুঁজিবাজার কোনো তালিকাভুক্ত বন্ড আসছে যা বিনিয়োগকারীরা চাইলে স্বল্প টাকায় বিনিয়োগ করে মুনাফা পেতে পারেন।
ডিএসই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বেক্সিমকোর এই সুকুক শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে। বিনিয়োগকারীরা চাইলে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে সুকুক শেয়ারে রূপান্তর হবে। যদি কোনো বিনিয়োগকারী সুকুককে শেয়ারে রূপান্তর করতে না চান তাহলে পাঁচ বছর পর তা অবসান হবে।
সুকুক থেকে রূপান্তরিত শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সুকুকের রেকর্ড ডেটের আগের ২০ দিনের বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের গড় মূল্যের ৭৫ শতাংশ।
‘আয় বাড়বে বেক্সিমকোর’
সুকুকের অর্থ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও টেক্সটাইলে বিনিয়োগ করলে কোম্পানির আয় বাড়ার আশা করছেন কোম্পানি সচিব আসাদ উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘যে দুটি প্রতিষ্ঠানের সুকুকের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে সেখানেও বেক্সিমকোর শেয়ার আছে। এছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেডের ও বিনিয়োগ হচ্ছে।’
কোন প্রতিষ্ঠানের কত শতাংশ বিনিয়োগ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি এখনও নির্ধারণ হয়নি। যারা এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন তারাই এটি নির্ধারণ করবেন।’
গত তিন মাসের বেক্সিমকো গ্রুপের বড় বড় বিনিয়োগের বিপরীতে প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে লেনদেনে বড় অংশ দখল করে রেখেছে বেক্সিমকো লিমিটেড।
প্রতিদিনের মোট লেনদেনে বেক্সিমকো লিমিটেডের অংশগ্রহণ থাকে প্রায় ১৫ শতাংশের বেশি। এই সময়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার দর ১৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ৯১ টাকা।
গত ফেব্রুয়ারিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি দুবাইতে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ আনতে রোড শোর অংশ হিসেবে সুকুকের প্রচারণা চালিয়েছে।
সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সুকুক বন্ডে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ সচিবের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি।
গত ডিসেম্বরে সুকুক বন্ড ছেড়ে চার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ তুলেছে সরকার। এ অর্থ সারা দেশে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিচালিত ব্যয় করা হবে।
সুকুক বন্ডে কোনো সুদ নেই। এটি ট্রাস্টির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে মূলত বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
আর ওই প্রকল্পের মালিকানার অংশীদার হন সুকুক বন্ডের বিনিয়োগকারীরা, অন্য বন্ডে এই সুযোগ নেই। সুকুক বন্ডের বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে ওই প্রকল্পের সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে।