বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেছেন, ‘এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্তমান সার্ভিল্যান্স পদ্ধতি খুবই শক্তিশালী। তাই পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের মতো ঘটনা আর কখনো ঘটবে না। আমাদের পদক্ষেপের কারণেই লেনদেনের হার বেড়েছে। লেনদেন বেশি হলে সূচক স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। বর্তমান সূচক প্রায় সাড়ে ৫ হাজার, এটি খুব দ্রুত ৬ থেকে ৭ হাজার পয়েন্টে পৌঁছাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজারের স্বল্প মূলধনী প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা এসএমই বোর্ড গঠন করা হচ্ছে। এই বোর্ডে লেনদেন হবে পেইডআপ ক্যাপিটাল ৫০ কোটি টাকা নিচে থাকা কোম্পানির। বোর্ড গঠনের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) বলা হয়েছে।
গত ১লা মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে নিজ কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকারে পুঁজিবাজারের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। পুঁজিবাজারের নানা সংকট, সম্ভাবনা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কে কথা বলেন তিনি।
২০২০ সালে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। দায়িত্ব নিয়ে কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সংকটে পড়তে হয়। সেই সংকট কাটিয়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন নতুন উচ্চতায় নিয়ে আসেন তিনি। সূচকের অবস্থান ৩ হাজার ৯০০ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজারে পৌঁছেছে তার দায়িত্বের স্বল্পকালীন সময়ে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে অন্যান্য বাজারের মতো কোনো পণ্য বিক্রি হয় না। আইনকানুনের মধ্য দিয়ে বাজারে স্টক হাতবদল হয়। যারা বিনিয়োগ করতে আসেন তারা নানা মনস্তাত্ত্বিক বিষয় চিন্তা করেই বিনিয়োগ করেন। একটি সুষ্ঠু ও শক্তিশালী পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতিকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। আমরা সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। সব নিয়মনীতি পরিপালনের মাধ্যমেই স্থিতিশীল পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে। এখানে জোর করে কোনো কিছু করা যাবে না। নিজের গতিতেই বাজার স্থিতিশীল ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘বাংলাদেশের স্টক মার্কেট নানা সংকট পাড়ি দিয়েছে। ২০১০ সালের ঘটনা থেকে আমরা যে অভিজ্ঞতা পেয়েছি, তখন এত বেশি সার্ভিল্যান্স ছিল না। অনেক কিছু ধরা যেত না। এখন মুহূর্তের মধ্যে বলে দেওয়া সম্ভব কে কোথায় লেনদেন করছে। আমরা কোনো কিছু সন্দেহজনক মনে হলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে পারছি। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই ২০১০ সালের মতো ঘটনা কখনো আর ঘটবে না।’
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি, বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধির চিত্র প্রকাশিত হবে পুঁজিবাজার থেকে। তেমনি পুঁজিবাজার গড়তে হলে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি আমরা এখন বিদেশি বিনিয়োগের দিকে নজর দিয়েছি। ইতিমধ্যে দুবাইয়ে আমরা রোড শো করেছি। ভবিষ্যতে আমরা এমন আয়োজন আরও করব।
দুবাইয়ের রোড শোতে সেখানকার বিপুলসংখ্যক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং কাজ শুরু করেছি আমরা। অতীতে আমাদের যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি ছিল, সেটি পুরোপুরি কেটে গিয়েছে। এখন আমাদের প্রয়োজন এসব বৃহৎ অর্থলগ্নি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা। সে জন্য কিছু সুবিধাও দিতে হবে। বাজারে যারা আসবেন তাদের কিছু সুবিধা আমরা দেব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা সূচক দিয়ে বাজারে পরিস্থিতি পাল্টাতে চাই না। আমরা চাই লেনদেনের হার বাড়াতে। এ জন্য আমরা দায়িত্ব নিয়েই ১২ হাজার কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিয়েছি। স্টক মার্কেটে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্তির শর্তে এই বন্ডের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামীতে সব বন্ডের লেনদেন হবে। বাজারে লেনদেন বাড়লেই গভীরতাও বাড়বে। আমরা বেশ কিছু আইন করেছি।
এসব আইনের সুবিধা বিনিয়োগকারীরা আগামী দুই বছরের মধ্যে দেখতে পাবেন। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কিছুর সুপ্রভাব পড়ে না। কোনো কিছুর সুপ্রভাবের জন্য সময় দিতে হবে। আমাদের পদক্ষেপের কারণেই লেনদেন হার বেড়েছে। লেনদেন বেশি হলে সূচক স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। বর্তমান সূচক প্রায় সাড়ে ৫ হাজার, এটি খুব দ্রুত ৬ থেকে ৭ হাজার পয়েন্টে পৌঁছাবে।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ডিরাইভেটিভ মার্কেট গঠনের জন্য কাজ চলছে। এগুলো বাজারে বড় ভূমিকা রাখবে। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য প্রচুর আবেদন আসছে। বৃহৎ মূলধনী কোম্পানির পাশাপাশি ছোট মূলধনী কোম্পানিও বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার আরও বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ করা হচ্ছে। নতুন করে ব্রোকারেজ হাউসের অনুমতি দেওয়া হবে। প্রতিযোগিতা বাড়লে অনিয়ম করার সুযোগ কমে যাবে। বাজারে সব সময় একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি থাকে। তারা কিছু সুবিধা নিতে চায়। ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বাজার মেনিপুলেট করার চেষ্টা করে। এ সুবিধা নেওয়া গ্রুপকে আটকাতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।