পর্ষদ পুনর্গঠন করা মানেই কোম্পানি চালু হওয়া নয়। আমাদের বিনিয়োগকারীরা একটু বেশি আবেগপ্রবণ হওয়ায় যে সকল খবরে মুনাফা হতে পারে মনে করে এমন বিষয়ে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্ত এক্ষেত্রে সব কিছু জেনে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’
বন্ধ হয়ে যাওয়া চারটি কোম্পানি চালু করতে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদ্যোগের পর উৎপাদনে না থাকা কোম্পানির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের।
উৎপাদন বন্ধ থাকা যে দুটি কোম্পানির পর্ষদ রোববার পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেই সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও ফ্যামিলি টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে একদিনে যতটুকু বাড়া সম্ভব ততটুকুই। বিএসইসি একই দিন ইউনাইটেড এয়ার ও এর আগে পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে রিং সাইন টেক্সটাইলের।
এই সিদ্ধানের পর প্রথম কার্যদিবস সোমবার এমারেল্ড অয়েল, তুংহাই নিটিং, জুট স্পিনার্স, ইমাম বাটনের মতো কোম্পানিগুলার দাম বেড়েছে, যেগুলোর সবগুলোর উৎপাদন বন্ধ। বিপুল লোকসানের বোঝা নিয়ে ডুবে আছে।
তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ আবার সাবধান করেছেন বিনিয়োগকারীদের। তিনি বলছেন, ‘পর্ষদ পুনর্গঠনে করা মানেই কোম্পানি চালু হওয়া নয়। আমাদের বিনিয়োগকারীরা একটু বেশি আবেগপ্রবণ হওয়ায় যে সকল খবরে মুনাফা হতে পারে মনে করে এমন বিষয়ে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্ত এক্ষেত্রে সব কিছু জেনে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’
লেনদেনে দুর্বল কোম্পানি
সিএ্যান্ডএ টেক্সটাইলের দাম সর্বোচ্চ বেড়েছে ১০ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার দর ২ টাকা থেকে বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ ২ টাকা ২০ পয়সায় উঠেছে। কোম্পানিটির মোট ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৪ লাখ টাকায়।
গত এক মাসে কখনই এই কোম্পানির শেয়ার ৭ লাখের বেশি লেনদেন হয়নি।
ফ্যামিলি টেক্সের শেয়ার ২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৯০ পয়সা হয়েছে। শতকরা হিসাবে ৭.৪০ শতাংশ। এক দিনে এর চেয়ে বেশি বাড়ার সুযোগও ছিল না।
কোম্পানিটির ১৪ লাখ ১২ হাজার ৯৮৮টি শেয়ার লেনদেন হেয়ছে ৪০ লাখ টাকায়। এই কোম্পানির ক্ষেত্রেও গত এক মাসের সর্বোচ্চ ৮ লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়নি।
জুট স্পিনার্সের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার দর ৯৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০২ টাকা। কোম্পানিটির ৩ হাজার ১৪৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩ লাখ টাকায়।
আর ইমাম বাটনের ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। শেয়ার দর ১৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা ৮০ পয়সা। ৪০ হাজার ৬৫৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে আট লাখ টাকায়।
এমারেল্ড অয়েলের দাম বেড়েছে ৯.৯০ তাংশ। দিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৬১ টাকায় হাতবদল হয়েছে ৩৭ হাজারেরও বেশি শেয়ার।
তুং হাই নিংটিং ও ডায়িং লিমিটেডের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২ লাখ ৪৪ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬ লাখ টাকার।
বাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীদের বক্তব্য
পুঁজিাবাজর বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘পর্ষদ পুনগঠন করে তাদেরকে সেখানে বসিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। এখন যেটা করা উচিত সেটা হচ্ছে, পর্ষদকে সময় নিয়ে কোম্পানির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে বিএসইসিকে অবগত করবে। কোম্পানির কী আছে, কী করা উচিত সেটির দিন নির্দেশনা দেবে।’
বিনিয়োগকারীদের সাবধান করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো ব্যাংক ঋণ জর্জরিত। এদের মেশিনারিজও তেমন নেই। এখন যদি এসব কোম্পানি আর চালু করা সম্ভব না হয় তাহলে অবসায়নেরও পরামর্শ দিতে পারে। যদিও আমাদের দেশে কোম্পানি অবসায়নের প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল।’
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখন যে কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনঃগঠন করা হচ্ছে সবগুলোই ভালো কোম্পানি ছিল। কোম্পানিগুলো কারসাজি করে তাদের সম্পদ নষ্ট করেছে। পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে অন্য ব্যবসা করছে।
‘এখন সেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তো চাইবেই এসব কোম্পানি বিক্রি হয়ে যাক। কিন্ত কেউ নিয়ে যাক। পুনঃগঠিত পর্ষদের উচিত হবে কোম্পানিটি কোন নষ্ট হলো তার কারণ খতিয়ে বিএসইসির কাছে রিপোর্ট করা। এবং সেই অনুযায়ী উদ্যোক্তা পরিচালকদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।’
লেনদেনের চিত্র
দিনভর উঠানামা শেষে শেষ পর্যন্ত সূচক বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর বাড়ায়। গত দুই মাসের ধারাবাহিকতায় এদিনও লেনদেনে এগিয়ে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বেট বাংলাদেশ ও রবি।
দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল প্রকৌশল খাত আর দর পতনের দিক দিয়ে বিমা খাত। দর পতন হওয়া শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে বিমা খাতের ছিল চারটি।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২২ দশমিক ০২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২৬ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৬ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২৯ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১০৫টির ও পাল্টায়নি ১১৮টির।
লেনদেন হয়েছে ৬১৮ কোটি টাকা। আগের দিন রোববার লেনদেন হয়েছিল ৬৬০ কোটি টাকা। এ হিসেবে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৪২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮৩ দশমিক ২২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৭ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২২৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৭টির, কমেছে ৫৭টির ও পাল্টায়নি ৭২টির। লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি অন্তর্ভূক্ত না হওয়ায় দর বৃদ্ধির শীর্ষ কোম্পানি হিসেবে ছিল নতুন তালিকাভুক্ত ইজেনারেশন লিমিটেড, যার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
জিবিবি পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। জিকিউ বলপেনের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এছাড়া এ তালিকায় ছিল তওফিকা ফুড অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড, এসএস স্টিল।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল ইউনিলিভার, যার দর কমেছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
অরামিট সিমেন্টের শেয়ার দর কমেছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমেছে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এছাড়া এ তালিকায় ছিল ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, জনতা ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।