পুঁজিবাজারের ১১টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে অস্বাভাবিক শেয়ার বিক্রির আদেশ আসার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশে এই তদন্ত চলছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে সূচকের পতন হয় ১৪২ পয়েন্ট। শুরু হয় হইচই। গত ডিসেম্বর থেকে চাঙা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা যখন তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশায়, তখন হঠাৎ এমন পতন ভাবিয়ে তুলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও।
বিএসইসির সার্ভিল্যান্স টিম তাৎক্ষণিকভাবে ১১ ব্রোকারেজ হাউজ থেকে অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রির আদেশ দেখতে পায়।
সেদিনই এই টিমের সদস্যদের ডেকে কথা বলেন বিএসইসির একজন কমিশনার। বিএসইসির একজন কমিশনার জানান, সেদিন যে ১৪২ পয়েন্ট সূচকের পতন হয়, তার ৮০ পয়েন্টই কমে ওই ১১ হাউজের অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রির কারণে।
সেদিনের পর থেকে পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়। গত ডিসেম্বরের শেষ থেকে টানা এক মাস যেখানে এক হাজার কোটি টাকার বেশি আর টানা ১০ দিন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, সেখানে এখন লেনদেন নেমেছে এসেছে ৪০০ থেকে ৬০০ কোটির ঘরে।
সূচক প্রায় দিনই কমছে, সেই সঙ্গে কমছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা। কোনো কোনো এক বা দুই দিন শেয়ারমূল্য বাড়লেও পরে তা আবার পড়ছে।
৭ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার দিন বিএসইসি জানায়, তারা বাজারে নজরদারি করবে। কিন্তু পরদিনও সূচকের বড় পতন হয়। বাজার পড়ে ১২৮ পয়েন্ট।
এই দুই দিনে সূচকের বড় পতনে দায়ী ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর দাম কমা। ৮ ফেব্রুয়ারি এই কোম্পানির শেয়ার আগের দিনের তুলনায় ১০০ টাকারও কমে বিক্রি হয়েছে। ওই দিন কোম্পানিটির যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে একটি সিকিউরিটিজ হাউজ থেকেই বিক্রি হয়েছে ১৩.৬৩ শতাংশ শেয়ার। ওই প্রতিষ্ঠানটি কেন এত শেয়ার এক দিনে বিক্রি করে দিল, সেটিই খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।
সেদিন গ্রামীণফোনের যত শেয়ার বিক্রি হয়েছে, তার ২০.৯৫ শতাংশই বিক্রি করেছে অন্য একটি হাউজ। আরেকটি হাউজ বিক্রি করেছে একই কোম্পানির ১৩.২৯ শতাংশ শেয়ার।
আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির লেনদেন হওয়া শেয়ারের ২২.৫১ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে আরও একটি হাউজ।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ব্রোকার হাউজগুলোকে চিহ্নিত করার পর সেগুলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে, তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে।
সময় শেষ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘৭ তারিখ চিহ্নিত করার পর সেদিনই তা পাঠানো হয়নি। কিছু প্রক্রিয়া আছে, তা শেষ করে পাঠানো হয়েছে। তবে ১৫ দিন এখনও শেষ হয়নি। ডিএসই বিষয়গুলো তদন্ত করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।’
এই তদন্ত করছে ডিএসইর রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন (আরএডি) শাখা। এসব বিষয়ে ওই শাখা কখনও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে না।
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি ডিএসইর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।