‘কোম্পানির সামর্থ্য আছে বলেই লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানি ঝুঁকি বিবেচনা করেই লভ্যাংশ প্রদান করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রভিশন সংরক্ষণের নির্দেশনা দিতে পারে। খেলাপি ঋণ কমানোর পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু লভ্যাংশ বেঁধে দিতে পারে না। আমার মনে হয় পুঁজিবাজার নিয়ে তাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) ভাবনার জায়গা খুবই কম। তা না হলে এমন সিদ্ধান্ত আসত না।’
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে আদেশ দিয়েছে, তাকে ‘বাজে সিদ্ধান্ত’ বলছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ।
দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে না। ভালো কোম্পানিগুলোও প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথমে ব্যাংক ও ২৪ ফেব্রুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে আদেশ জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানানো হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যতই মুনাফা করুক, শেয়ারধারীদেরকে শেয়ার প্রতি দেড় টাকার বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে না। আর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি হলে কোনো লভ্যাংশই দেয়া যাবে না।
এর আগে ব্যাংকের মুনাফার ক্ষেত্রে জানানো হয় ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে, তবে কোনো অবস্থাতেই ১৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি দেড় টাকার বেশি দেয়া যাবে না।
ব্যাংকের মুনাফার সীমা বেঁধে দেয়ার পর থেকে এই খাতের শেয়ারগুলোর দর দুই সপ্তাহ ধরে পড়ছে লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত আসার পর দিন প্রথম কার্যদিবসে কমেছে এই খাতের প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দর।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত এসেছে এমন সময় যখন তিনটি কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে আর একটি কোম্পানি শেয়ার প্রতি সাড়ে তিন টাকা করে লাভ দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘এটা খুবই বাজে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে ভালো প্রভাব পড়বে না নিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘কোম্পানির সামর্থ্য আছে বলেই লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানি ঝুঁকি বিবেচনা করেই লভ্যাংশ প্রদান করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রভিশন সংরক্ষণের নির্দেশনা দিতে পারে। খেলাপি ঋণ কমানোর পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু লভ্যাংশ বেঁধে দিতে পারে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারের জন্যও ভালো। কারণ, কোম্পানি ভালো হলে শেয়ারধারীরাই এর সুফল পান।
তবে আবু আহমেদ বলছেন, বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো যখন লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল তখন শেয়ারের যে দর ছিল এখন তা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের পর বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ কমে আসলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা। এর দায় কে নেবে?’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় পুঁজিবাজার নিয়ে তাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) ভাবনার জায়গা খুবই কম। তা না হলে এমন সিদ্ধান্ত আসত না।’
ব্যাংকগুলোর অর্থবছর শেষ হয় ডিসেম্বরে। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার অর্থবছর শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে হবে। তবে বোর্ড সভা করে ৯০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হয়।
লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে যখন কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে, তখন এবার উল্টো সুর মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনার কারণে।