পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবন্টিত লভ্যাংশ, বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত হিসেবে থাকা দাবীহিন টাকা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ফান্ডের গঠনের খসড়া প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জনমত যাচাইয়ের পর তা চূড়ান্ত করবে কমিশন। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এই ফান্ড গঠন করা সম্ভব বলে মনে করে কমিশন।
বিএসইসি সূত্র মতে, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে অবন্টিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। সেখানে প্রতিষ্ঠান তিনটিকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য চেয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে ডিএসই কোম্পানিগুলোকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিষ্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ৭ দিন সময় বাড়িয়েছে বিএসইসি। এর পর ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. কাউসার আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
কমিশন সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে ফান্ডের আকার হবে ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানিতে নগদ টাকা রয়েছে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাকীগুলো রাইট বা বোনাস শেয়ারে রয়েছে। তবে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে দাবীহিন টাকার পরিমাণের তথ্য বিএসইসির কাছে আসেনি। সব মিলিয়ে আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ফান্ড গঠন করে পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আশাবাদী বিএসইসি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে কাজ করছে। ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীরা।
তাঁরা বলছেন, বিএসইসি অবন্টিত লভ্যাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, নিশ্চয়ই এটি অনেক ভালো খবর। তবে এই টাকা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক ভালো কিছু হবে। কোনো কারণে সঠিকভাবে বিনিয়োগ না হলে কষ্টের সীমা থাকবে না।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি ফান্ড গঠন করার কাজ করছে বিএসইসি। এই ফান্ডগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে পড়ে আছে। এগুলোকে একত্র করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য কাজে লাগাতে চাই।
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড খসড়ায় যা আছে:
বিএসইসির এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, সব অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ ও শেয়ার এ তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোনো সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্নিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের আছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
খসড়ায় আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কোনো বিনিয়োগকারীর কতটা অবণ্টিত লভ্যাংশ বা অর্থ বা শেয়ার পড়ে আছে, তা সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ তহবিলকে হস্তান্তর করতে হবে। তবে এ তালিকা প্রকাশের বিষয়টি বিধিমালায় নেই। প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশে সংশ্নিষ্ট কোম্পানি এবং তহবিলের পক্ষ থেকে ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ ও হালনাগাদ করা হয়।
খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, স্থিতিশীলকরণ তহবিলটি ব্যবস্থাপনায় ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরস থাকবেন, যার চেয়ারম্যান ছাড়াও তিনজন সদস্য মনোনীত করবে বিএসইসি। এছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল),সিসিবিএল, (এফসিএ,এফসিএমএ ও সিএফএ), তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বিএপিএলসি থেকে একজন করে সদস্য থাকবে। অন্যদিকে তহবিলের প্রধানের পদ হবে চিফ অব অপারেশন। প্রথম বোর্ড গঠন করবে কমিশন।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, তহবিল থেকে বাজারের তারল্যপ্রবাহ এবং গভীরতা বাড়াতে শেয়ার কেনাবেচা বা ধার প্রদান বা ধার গ্রহণ করা হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে তহবিলের কোনো লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি।