কোনো একক গ্রুপ নয়। ব্যাংক, আর্থিক খাত, বিমা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ এমন কোনো খাত নেই যেগুলো দর হারায়নি। করোনা সংক্রমণের পর পতন ঠেকাতে বেঁধে দেয়া ফ্লোর প্রাইস (যে দরের নিচে নামতে পারবে না দাম) এখন ভরসা হয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। ৮০টিরও বেশি কোম্পানি এই ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে। তবে সর্বনিম্ন দামেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অন্তত তাদের টাকা হারাচ্ছে না।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারের লেনদেন আবার হতাশ করল বিনিয়োগকারীদের। প্রায় ২০০ কোম্পানির দরপতনে টাকা হারিয়ে পতনের কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা।
কিন্তু না নিয়ন্ত্রক সংস্থা, না স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ, না বাজার বিশ্লেষক-কেউ সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।
কোনো একক গ্রুপ নয়। ব্যাংক, আর্থিক খাত, বিমা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ এমন কোনো খাত নেই যেগুলো দর হারায়নি।
করোনা সংক্রমণের পর পতন ঠেকাতে বেঁধে দেয়া ফ্লোর প্রাইস (যে দরের নিচে নামতে পারবে না দাম) এখন ভরসা হয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। ৮০টিরও বেশি কোম্পানির শেয়ার এই ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে। তবে সর্বনিম্ন দামেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অন্তত তাদের টাকা হারাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে লোকসান গুনে শেয়ার ছেড়ে দেবেন নাকি ধরে রেখে আরও দরপতনের ঝুঁকি নেবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না কেউ।
বেক্সিমকো লিমিডেট, বেক্সিমকো ফার্মা, নতুন শেয়ার তওফিকা (লাভেলো আইসক্রিম), দুর্বল কোম্পানি ডেল্টা স্পিনার্স, কেয়া কসমেটিকস, খান ব্রাদার্স, শ্যামপুর সুগার আর বহুজাতিক রেকিট বেনকাইজার, বার্জার পেইন্টস, ইউনিলিভার ছাড়া সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারধারীদেরই টাকা কমেছে।
পতনের এই দিনে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রায় ২০০ টাকা দর বাড়া ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিও দর ধরে রাখতে পারেনি। ৮০০ শতাংশ মুনাফা ঘোষণার পরেও ১০০ টাকা দর হারানোর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, সে প্রশ্ন তুলছেন শেয়ারধারীরা।
গত কয়েক মাসে তালিকাভুক্ত নতুন শেয়ারে বিপুল পরিমাণ লোকসান হলেও আরেক নতুন শেয়ার লাভেলো আইসক্রিমের দর বেড়েছে আবার সর্বোচ্চ পরিমাণ।
তওফিকা নামে লেনদেন হতে থাকা শেয়ার প্রথম দুই কার্যদিবসে বেড়েছে ৫০ শতাংশ করে। রোববার তৃতীয় কার্যদিবসে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার অর্থাৎ ১০ শতাংশ বাড়া বা কমার সুযোগ ছিল। বেড়েছে ১০ শতাংশ।
গত তিন মাসে তালিকাভুক্ত রবির লেনদেন শুরুর পর উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে ক্ষতির মুখে পড়া রবির শেয়ারধারীরা আরও টাকা হারিয়েছেন।
কোম্পানির দর কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
পকেট ফাঁকা করা আরেক নতুন কোম্পানি এনার্জিপ্যাকে বিনিয়োগ করে আরও হাওয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের টাকা। এই কোম্পানি আরও দর হারিয়েছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র দুটির। পাল্টায়নি তিনটির। ফলে দর কমেছে ২৫টির।
বিমা খাতের পতন ছিল সবচেয়ে বেশি। তালিকাভুক্ত ৪৯টি বিমা কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র চারটির। পাল্টায়নি তিনটির। বাকি ৪২টি বিমা কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। আর এর মধ্যে বেশ কয়েকটির দর কমেছে সর্বোচ্চ যত কমা সম্ভব ততই।
বিনিয়োগকারী রেজাউল করিম বলেন, বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যখন কোনো কোম্পানি ঘুষ দাবির অভিযোগ করে, তখন তা সার্বিক বিমা খাতের ওপর প্রভাব ফেলে। যদিও আইডিআরএ থেকে এ বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। তারপরও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বাজারের সার্বিক বিষয়ে আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগের অনেকগুলো খাত সচল। তবে যে বিনিয়োগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে প্রভাব পড়বে সেটি খুবই কম। কারণ, নতুন আইপিও আবেদন শুরু হয়েছে। সেখানে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছেন। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু হচ্ছে। সেখানে বিনিয়োগ হচ্ছে, যা সরাসরি সূচক ও লেনদেনে কোনো প্রভাব ফেলে না।
তিনি বলেন, ‘কিছু বিনিয়োগকারী আছে যারা আগে বেশি দামে শেয়ার কিনেছিল তারা এখন সমন্বয়ের চেষ্টা করছে, যার সংখ্যা খুব বেশি হবে না। ফলে সূচক ও লেনদেন যে পর্যায়ে আছে তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
সূচক ও লেনদেন
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে-ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৭ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৮ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১০ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৯ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৭টির, কমেছে ১৯৩টির, পাল্টায়নি ১০১টির।
লেনদেন হয়েছে ৮০১ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। রোববার ডিএসইর লেনদেন কমেছে ২৫৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৯৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৮৯ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ১৪৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৫টির, কমেছে ৮৩টির, পাল্টায়নি ২৭টির। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের শীর্ষে যেগুলো
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের, ২১৭ কোটি টাকায় ২ কোটি ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার শেয়ার।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিএটিবিসি, যার ৬ লাখ ২৫ হাজার ১৭৫টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০২ কোটি টাকায়।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার ২৫ লাখ ৪৮ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৪ কোটি টাকায়।
চতুর্থ অবস্থানের রবির ৪২ লাখ ৯২ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি টাকায়।
এ তালিকায় ছিল লংকাবাংলা ফিন্যান্স, সামিট পাওয়ার, মীর আকতার হোসেন লিমিটেড।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল জেড ক্যাটাগরির ডেল্টা স্পিনার্স, যার দর বেড়েছে ৯.৮৫৯ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কেয়া কসমেটিকসের দর বেড়েছে ৯.৮৩৬ শতাংশ।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা সদ্য তালিকাভুক্ত হওয়া তওফিকা ফুডস অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এই তিনটি কোম্পানির এক দিনে এর চেয়ে বেশি দর বাড়া সম্ভব ছিল না।
এর বাইরে বেক্সিমকো লিমিটেডের ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ, বেক্সিমকো ফার্মার ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ দর বেড়েছে।
পতনের দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল বিমা খাত। সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১৪টি কোম্পানির মধ্যে ১৩টিই এই খাতের।
সবচেয়ে বেশি দর কমেছে প্রাইস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৯.৬৪ শতাংশ। এ ছাড়া সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ৯.২৭ শতাংশ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ৮.৮৬ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ৮.৬৬ শতাংশ দর হারিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দর হারানোর তালিকায় আরও ছিল ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, নর্দান ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স ও কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। বিমা খাতের বাইরে জিল বাংলা সুগার লিমিটেডও ছিল শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায়।