দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজার বেশ কিছুদিন স্থিতিশীল থাকলেও সম্প্রতি হঠাৎই এর চিত্র বদলে গেছে। নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে সূচক। ছোট ছোট পতন থেকে এখন তা বড় পতনে রূপ নিয়েছে। ফলে যারা সম্প্রতি বাজারে এসেছিলেন তারা বেকায়দায় পড়েছেন। পুঁজি রক্ষায় হিমশিন খাচ্ছেন ভুক্তভোগী এসব বিনিয়োগকারী। যে কারণে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলে এক কোম্পানির শেয়ার থেকে অন্য কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন তারা।
এদিকে এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এক শেয়ার ছেড়ে অন্য শেয়ারে গেলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেন না। বরং তারা বারবার শেয়ার কেনাবেচা করলে হাউস কর্তৃপক্ষই লাভবান হয়।
সাম্প্রতিক বাজার চিত্রে দেখা যায়, কয়েকদিন বড় পতনের পর গত সপ্তাহে একদিন সূচক বৃদ্ধি পায় ১২২ পয়েন্ট। এর আগের দুই কার্যদিবসে সূচক হ্রাস পায় ২৭০ পয়েন্ট। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে আবারও পতনের ধারায় চলে যায় বাজার।
এদিকে বাজারের এই পরিস্থিতিতে নিজেদের পুঁজি রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এ ক্ষেত্রে তারা বেছে নিয়েছেন সমন্বয় ও পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন। কেউ কেউ বড় লোকসানের ভয়ে কম লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি তুলে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এ পরিস্থিতিতে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, পতনমুখী বাজারে পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনছেন তারা। দুর্বল কোম্পানি ছেড়ে তারা বের হয়ে আসার চেষ্টা করছেন। এছাড়া মৌলভিত্তির শেয়ারের ক্ষেত্রেও একই নীতি অবলম্বন করছেন তারা। লোকসানের ভয়ে এক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে কিনছেন অন্য কোম্পানির শেয়ার।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দুর্বল কোম্পানি থেকে বের হয়ে আসার কারণে এসব কোম্পানির দৌরাত্ম্য আগের চেয়ে অনেক কমেছে। পক্ষান্তরে বেড়েছে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা, যার জেরে এ ধরনের কোম্পানির লেনদেনও বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহের শেষের দিকে এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়তে দেখা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, পুঁজিবাজারে কিছু বিনিয়োগকারী দ্রুত মুনাফা করে তা ঘরে তুলতে চান। আবার লোকসানের ভয়ে এক কোম্পানি ছেড়ে অন্য কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগ করেন। এ সময় কেউ কেউ অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানিতে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু যারা ঝুঁকি নিতে চান না, তারা ভালো কোম্পানির সঙ্গে থাকেন। এখানে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলে তাদের ভালো মুনাফা তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা ভালো কোম্পানির সঙ্গে থাকলে তা বাজার ও বিনিয়োগকারী উভয়ের জন্যই ভালো। অধিক লাভের আশায় নামসর্বস্ব কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে তাদের উচিত ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা; কারণ এখানে খুব বেশি লাভ না হলেও লোকসান হওয়ার শঙ্কা থাকে কম।’ বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ভালো নয়। একই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত সব সময়ই ভালো মানের কোম্পানির সঙ্গে থাকা। এতে তারা সব সময়ই অপেক্ষাকৃত নিরাপদে থাকতে পারেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান দিয়ে কিংবা অন্যের দেয়া সংবাদে দ্রুত লাভবান হওয়ার জন্য যে কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। তারা লোকসানে এক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এর ফল উল্টো হয়। একসময় এসব শেয়ার নিয়ে তাদের পস্তাতে হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় হাউস থেকেই বিনিয়োগকারীদের এক শেয়ার ছেড়ে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়। এটা ঠিক নয়। এতে হাউস কর্তৃপক্ষই লাভাবান হন, বিনিয়োগকারী নয়।