পৈত্রিক সূত্রে নাদিমের (ছদ্মনাম) হাতে মোটামুটি অংকের একটা অর্থ আছে। তিনি তা শেয়ারবাজারে লগ্নি করতে চান। এজন্য পুরো মূলধন বাজার এবং কোন গতিতে এমনকি পতনের পরও শেয়ারগুলো ফের ঘুরে দাঁড়ায় এ সম্পর্কে তিনি রীতিমতো গবেষণা করে আসছেন। তার বাবার সঙ্গেও অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন। তার বাবা তাকে জানান যে, সাধারণত এসআইপির মাধ্যমে তিনি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন। একজন নতুন বিনিয়োগকারী হিসেবে এসব ধারণা নিশ্চয়ই তাকে একটি ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড কিনতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু তাতে সাফল্যের নিশ্চয়তা নেই। আবার এই অর্থ সঞ্চয়ের আর কোনো উপায় আছে কিনা তা জানতেও তিনি আগ্রহী। সবাই একমত যে, অতীত নৈপুণ্যের ওপর ভিত্তি করে মিউচুয়াল ফান্ড নির্বাচন কোনো ভুল অ্যাপ্রোচ নয়, তবে সার্বিকভাবে চোখ-কান খোলা রাখাটা জরুরি।
শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইনডেক্স ফান্ড সবগুলোর ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু সুবিধা আছে, রয়েছে যথাযথ গাইডেন্সও। এসব বিষয় বিবেচনা করে নাদিম সবগুলোতেই লগ্নি করতে পারেন। বিভিন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ তাকে পোর্টফোলিও অধিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা দেবে; যার ভিত্তিতে তিনি সুর্নিদিষ্ট শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন এবং একবার ভালো লভ্যাংশ পেলে দ্রুত প্রস্থান করতে পারেন। বলা চলে, খুব ছোট ছোট বিনিয়োগ দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সহজেই তাকে বহুমুখী করে তুলবে।
মিউচুয়াল ফান্ডগুলোয় একজন নিবেদিত ফান্ড ম্যানেজার থাকেন, যিনি ভারতীয় শেয়ারবাজারগুলো এবং বিদেশী তহবিলগুলো সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ফলে অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের খুব বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো এভাবে নতুন বিনিয়োগকারীদের একটি সুশৃঙ্খল উপায়ে বিনিয়োগের পথ সুগম করে দেয়।
ইনডেক্স ফান্ডেও নতুনদের বিনিয়োগের সুযোগ আছে। ইনডেক্স ফান্ড এক ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড, যেখানে শেয়ারগুলোর পোর্টফোলিও সক্রিয়ভাবে ফান্ড ম্যানেজার নির্বাচন করেন না, বরং এটি নিফটি ফিফটির মতো সূচকের একটি রেপ্লিকা। ইনডেক্স ফান্ডের সুবিধা এই যে এর পোর্টফোলিও অনুমানযোগ্য এবং এতে ব্যয়ও কম। কাজেই নাদিম নিম্ব ব্যয়ে খুব সহজেই বহুমুখীকরণের সুফল পেতে পারেন।
শক্তিশালী কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডগুলোয় তার ইক্যুইটি পোর্টফোলিও তৈরির বিষয়ও তিনি ভাবতে পারেন। কিন্তু এটি বাস্তবায়নের পথ কী? নাদিমের মতো নতুন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সেখান থেকে বিনিয়োগের জন্য কোনো কোনোটি নির্বাচন করা সহজ নয়। এই কাজটি তার পরামর্শকই সবচেয়ে সুচারুভাবে সামলাতে পারবেন। অবশ্য কারো পরামর্শ অন্ধভাবে অনুসরণ করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে তার করণীয় হল, কিসের ভিত্তিতে সুপারিশগুলো করা হয়েছে তা অনুসরণ করা এবং যথেষ্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরিত হয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা। এটি তাকে কেবল আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে নতুন বিনিয়োগে সাহায্য করবে না, বরং অব্যাহতভাবে লাভজনক বিনিয়োগে থাকতেও সাহায্য করবে। শেয়ারগুলোর ক্ষেত্রে নাদিম দশ বছরের নৈপুণ্য, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং প্রত্যাশিত রিটার্ন যাচাই করতে পারেন। আর মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ক্ষেত্রে তিনি এর বিনিয়োগ ধরন যেমন- মোমেন্টাম, মান, মূল্য এবং ক্ষুদ্র ক্যাপ প্রভৃতি), অতীত নৈপুণ্য (অন্য ফান্ডগুলোর তুলনায়), উদ্বায়িতা এবং ঝুঁকি-সমন্বিত রিটার্ন বিবেচনা করতে পারে।
নাদিমের মতো আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা অর্থ, মাসিক সঞ্চয়গুলো শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইনডেক্স ফান্ডগুলোয় বিনিয়োগ করা একটি ভালো মাধ্যম। বাজার নানা সময় ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তার জন্য অবশ্য পোর্টফোলিও দক্ষতার সঙ্গে সামলানো প্রয়োজন। অন্যের গড়পড়তা সুপারিশ নয়, পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বোঝাপড়া অর্জনের মাধ্যমেই এক্ষেত্রে যাত্রা করা উচিত।
সূত্র : দ্য ইকোনমিক টাইমস