পুঁজিবাজারে রোববার ১৪২ পয়েন্ট আর সোমবার ১২৮ পয়েন্ট সূচক পতনের পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে মঙ্গলবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার।
সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে সূচকে রেকর্ড ধসের পর মঙ্গলবার উত্থানে শুরু হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। বাড়তে শুরু করেছে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
পুঁজিবাজারে রোববার ১৪২ পয়েন্ট আর সোমবার ১২৮ পয়েন্ট সূচক পতনের পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বাজারের মূল্য সংশোধনের নামে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিম্ন ছিল সূচক ও লেনদেনের হার। শুরুর দিকে এই পতনকে মূল্য সংশোধন হিসেবে দেখা হলেও পরবর্তী সময়ে তা কারসাজি বা পরিকল্পিত পতনের কথা বলেছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইস) এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু ব্রোকার হাউজ থেকে অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রির প্রমাণ পান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে বাড়ানো হয় নজরদারি।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, লেনদেনের সময়ে অন্য কাজ কম রেখে বাজার মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে।
রোববার কমিশনের এমন উদ্যোগের পরদিন সোমবার আবারও সূচকের বড় পতন হয় পুঁজিবাজারে। কেন এমন পতন, তার কারণ সন্ধানে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করে বিএসইসি সার্ভিল্যান্স বিভাগ।
ডিবিএ প্রতিনিধিরা জানান, সূচকের হঠাৎ এমন পতনের মৌলিক কোনো কারণ নেই। তবে বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে ছোট বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করছেন বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন জানান, ব্রোকার হাউজগুলোতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বড় বিনিয়োগকারীরাও লেনদেন করে থাকেন। ছোট বিনিয়োগকারীরা যখন দেখেন কোনো কোম্পানির বড়সংখ্যক শেয়ার বিক্রি হচ্ছে, তখন তারাও হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। বেশিসংখ্যক শেয়ার যারা বিক্রি করছেন, তাদের হয়তো মুনাফা হয়েছে কিংবা তারা তাদের একটি অংশ বিক্রি করে দিচ্ছেন।
‘এখন তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবাই যদি সেই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেন তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। স্বল্পসময়ে মুনাফার প্রবণতা থেকেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এমনটি করছেন। পতনের মৌলিক কোনো কারণ নেই।’
বিএসইসি কমিশনার শাসমসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগবান্ধব করা যায়। এরই মধ্যে অনেকগুলো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারপরও যখন পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে, সেটি নিয়েও আমরা কাজ করছি। তবে বর্তমানে পতনের মৌলিক কোনো কারণ নেই।’
বিএসইসির এমন বক্তব্যের পর মঙ্গলবার অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে সূচক। লেনদেনের প্রথম এক ঘণ্টায় সূচক বেড়েছে প্রায় ৮৫ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ২০৭ কোটি টাকা।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৬টির, কমেছে ২২টির; পাল্টায়নি ৭১টির।
সূচক ও লেনদেন
মঙ্গলবার লেনদেনের এক ঘণ্টায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৫ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৬২ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৬ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩১ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৪৪ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮ পয়েন্টে। এ সময়ে লেনদেন হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা।
ডিএসইর সঙ্গে তাল মিলিয়ে উত্থানে আছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। লেনদেনের এক ঘণ্টায় সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৮৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭০৮ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। এই সময়ে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ২০টির; পাল্টায়নি ১৮টির।
আগ্রহ ও অনাগ্রহ কোম্পানি
সূচক ও লেনদেন বাড়ার দিনে প্রথম এক ঘণ্টায় দরবৃদ্ধির তালিকায় উঠে এসেছে দুর্বল বা জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি শ্যামপুর সুগার। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৯.৯৭ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হচ্ছে ৪৩ টাকায়।
এ ছাড়া তালিকায় আছে বেক্সিমকো ফার্মা, লংকাবাংলা ফিন্যান্স, গোল্ডেন সন ও বে লিজিং।
প্রথম এক ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া কোম্পানির তালিকায় আছে বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি টাকায়। তারপরই আছে বেক্সিমকো ফার্মা, যার ১৭ লাখ ৬৫ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি টাকায়।
রবির ৪২ লাখ ৩ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭২ কোটি টাকায়।
এ সময়ে দর পতনের শীর্ষে ছিল আমান কটন ফেব্রিক্স লিমিটেড, যার শেয়ার দর কমেছে ২.৫৮ শতাংশ। এ ছাড়া এ তালিকায় রয়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও অনালিমা ইয়ার্ড।