পরপর দুই দিন বড় দরপতন দেখল ঢাকার পুঁজিবাজার। আগের দিন ১৪২ পয়েন্টর পর আজ পড়ল ১২৮ পয়েন্ট। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যে নজরদারির কথা বলেছিল, তা কোনো কাজেই আসেনি।
পরপর দুই দিন বড় দরপতন দেখল দেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে মুষড়ে পড়ছেন।
রাজনীতি-অর্থনীতিতে অনিশ্চিত কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যাতে শেয়ারের মূল্য এভাবে পড়বে, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না বিশ্লেষকরাও।
দুই মাস চাঙাভাবের পর বাজারে কিছুটা পতন স্বাভাবিক বিষয়, যা পুঁজিবাজারে পরিচিত মূল্য সংশোধন হিসেবে। টানা পাঁচ দিন দরপতন শেষে গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে যখন বাজার ঘুরে দাঁড়ায়, তখন আশান্বিত হন বিনিয়োগকারীরা।
কিন্তু চলতি সপ্তাহের দুই দিনে ২৭০ পয়েন্ট দরপতনের কারণ খুঁজতে হয়রান সবাই। রোববার ১৪২ পয়েন্ট পতনের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিক্রয়ের চাপে বিএসইসি ১১ হাউজের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছিল। বলা হয়েছিল, সোমবার থেকে আরও বেশি নজরদারি করা হবে।
কিন্তু কাজে আসেনি কিছুই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়ে ১২৮ পয়েন্ট। দাম বাড়ে মাত্র ২৩টির। পতন হয় ২৩৬টির।
টানা দুই দিন ১০০ পয়েন্টের মতো পতন নতুন করে বিনিয়োগ ঝুঁকি তৈরি করল।
এই পতনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই আদেশ দায়ী কি না, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। আগের দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তফসিলি ব্যাংকগুলোর তারল্য রক্ষায় লভ্যাংশ প্রদানের সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
এতে বলা হয়, সবচেয়ে ভালো মানের ব্যাংকগুলো গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিতে পারবে। এ জন্য ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য খরচ বাদে ১৫ শতাংশ বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।
ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার বিবেচনায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। তবে এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
গত বছরের মে মাসে আরেক প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকগুলোর মুনাফা যথাসম্ভব অবণ্টিত রেখে মূলধন শক্তিশালী করতে বলা হয়েছিল।
তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ মনে করেন না এ কারণেই এই পতন। বলেন, ‘ব্যাংকের জন্য ৩০ শতাংশ বোনাস ঠিকই আছে। খুব কম ব্যাংকই ৩০ শতাংশ বোনাস দিচ্ছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সেক্টরের সুরক্ষার জন্য করেছে। আমার মনে হয় না এ সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারকে খুব বেশি প্রভাবিত করবে।’
তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র চারটি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে। তিনটি ব্যাংকের দর পাল্টায়নি। বাকি সবগুলো ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে।
তবে পতন কেবল ব্যাংকের হয়নি। গত কয়েক মাস ধরে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা বিমা কোম্পানিগুলো দর হারিয়েছে ব্যাপক হারে। তালিকাভুক্ত ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। আর দুটি কোম্পানির শেয়ার দর পাল্টায়নি। বাকি সব শেয়ারের দর কমেছে।
সূচক ও লেনদেন
সোমবার দিনের শুরুতেই কমতে থাকে সূচক। লেনদেনেও ছিল মন্থর গতি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচক কমার হার।
দিন শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে। আগের দিন রোববার এই সূচক কমেছিল ১৪২ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২০ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২১৪ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৬৭ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৩ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ২৩টির, কমেছে ২৩৬টির ও পাল্টায়নি ৯১টির।
লেনদেন হয়েছে ৭৮৯ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭৭১ কোটি টাকা। ফলে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৯৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫১৯ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২২৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, কমেছে ১৭৬টির ও পাল্টায়নি ৩৬টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের শীর্ষে যারা
লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। এ দিন কোম্পানিটির এক কোটি ৯৬ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪০ কোটি টাকায়।
বেক্সিমকো ফার্মার ৪০ লাখ ২২ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি টাকা।
বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড-বিএটিবিসি তিন লাখ ৫৮ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।
রবির এক কোটি ২৫ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫১ কোটি টাকার। এছাড়া এ তালিকায় ছিল লংকাবাংলা ফিন্যান্স, স্কয়ার ফার্মা লিমিটেড।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল অনালিমা ইয়ার্ন, যা বেড়েছে পাঁচ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে দুই দশমিক ৪৭ শতাংশ।
তালিকায় ছিল পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ঢাকা ব্যাংক, মীর আক্তার হোসাইন লিমিটেড, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল শ্যামপুর সুগার, যা কমেছে ৯.৯৩ শতাংশ। আমান ফিড কমেছে ৯.৯১ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি দরপতনের তালিকায় আরও ছিল বিডি থাই, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, বেক্মিমকো ফার্মা।