পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু বলেন, ‘উত্থান পতন স্বাভাবিক বিষয় পুঁজিবাজারে। বর্তমানে লেনদেনে প্রথম দিকে থাকা রবির শেয়ারের দর অনেক বেশি বেড়েছিল, এখন তার সংশোধন হয়েছে। এছাড়া বেক্সিমকোর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ফলে কয়েকদিনের পতনে এগুলো দাম কমেছে।’
টানা পতনের বৃত্ত থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজারে। টানা পাঁচ কার্যদিবস পর বাড়ল সূচক।
তবে কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দাম। যদিও বেড়েছে লেনদেন, আর মন্দা বাজারে একে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সে ১৭.১৭ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। শরিয়াভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচকে যোগ হয়েছে ৪.৪৮ পয়েন্ট, আর বাছাই করা ৩০টি কোম্পানির সূচকে যোগ হয়েছে ২৭.০১ পয়েন্ট।
সূচকের উত্থানের দিন আরও একটি প্রবণতা দেখা গেছে। নতুন কোম্পানি হিসেবে মঙ্গলবার লেনদেন শুরু করা মীর আখতার হোসাইন লিমিটেডের শেয়ার দর এদিনও ৫০ শতাংশ বাড়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। দর বেড়েছে ২৩ শতাংশ। সাম্প্রতিককালে নতুন শেয়ারে দ্বিতীয় দিন এত কম দাম বাড়তে দেখা যায়নি।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী শিশির বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পুঁজিবাজার উত্থান থাকার পর পতন হয়েছিল। এ সময়ে অনেক শেয়ারের দর কমেছে। বিশেষ করে রবির শেয়ারে দর গত কয়েকদিনে ৭১ টাকা থেকে কমে ৪৬ টাকায় নেমেছে। ফলে এখন রবিতে নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানিতেও বিনিযোগ আগ্রহী হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।’
ডিসেম্বরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা যায়। চালু থাকে শেষ সপ্তাগের আগ পর্যন্ত। এই সময়ে সূচকে যোগ হয় এক হাজার পয়েন্টের বেশি।
তবে পাঁচ হাজার ৮০০ পয়েন্ট অতিক্রম করার পর দাম ও সূচক কমতে থাকে, যাকে বাজার বিশ্লেষকরা স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন বলতে থাকেন।
তবে টানা বড় পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয় শঙ্কা। এটি মূল্য সংশোধন নাকি পতন-সে প্রশ্ন উঠে।
বুধবারের বাজার অনেক প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে- এমন আশা করা হচ্ছিল।
লেনদেনের শুরুতেই সূচকে ২০ পয়েন্ট যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক বাজারের আশা করা হয়। তবে তবে আধা ঘণ্টার মধ্যে সূচক ১৭ পয়েন্ট হারিয়ে ফেলার পর আবার উদ্বেগ তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে এরপর থেকেই আবার বাড়তে থাকে সূচক।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সূচকে ৪০ পয়েন্ট যোগ হয়। তবে পরের দুই ঘণ্টায় উঠানামা করতে থাকে আবার।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘উত্থান পতন স্বাভাবিক বিষয় পুঁজিবাজারে। বর্তমানে লেনদেনে প্রথম দিকে থাকা রবির শেয়ারের দর অনেক বেশি বেড়েছিল, এখন তার সংশোধন হয়েছে। এছাড়া বেক্সিমকোর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ফলে কয়েকদিনের পতনে এগুলো দাম কমেছে।’
বিনিয়োগকারীরা সচেতন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রবি, এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রথম তিন থেকে চার চার টানা বেড়েছে। দাম বাড়ার পর আইপিওপ্রাপ্তরা শেয়ার বিক্রি করেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেগুলো কিনে এখনও লোকসান গুনছে। কিন্ত মীর আক্তারের ক্ষেত্রে তা হয়নি।’
পুঁজিবাজারে ক্রমাগত যেসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে, সেসব কোম্পানির শেয়ার কেনা থেকে বিরত থাকলেই সাধারণ বিনিয়াগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষা হবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
সুচক ও লেনদেন
বুধবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এর অবস্থান দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫৮১ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৫০ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকের অবস্থান এখন দুই হাজার ১৩৬ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৭টির, কমেছে ১৮০টির ও পাল্টায়নি ১০৭টির।
ডিএসইতে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৯২ কোটি টাকা। বুধবার লেনদেন হয়েছে ৭৯৪ কোটি টাকা। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৭০২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩১ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২২৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ১২৫টির ও পাল্টায়নি ৫০টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি আগ্রহ-অনাগ্রহ
লেনদেনের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বেক্সিমকো লিমিটেড, যার এক কোটি ১৩ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি টাকায়।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবির এক কোটি ৫০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭২ কোটি টাকায়।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বৃটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের তিন লাখ ৭৩ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি টাকায়।
এই তালিকায় ছিল মীর আক্তার হোসাইন লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, লংকাবাংলা ফিন্যান্স।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল মীর আক্তার হোসাইন লিমিটেডের। বেড়েছে ২৩.৭০ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানের ফিনিক্স ফিন্যান্সের ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল সদ্য তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানি এন্যার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, যার দর কমেছে ৯.৮৩ শতাংশ।
রবির দর কমেছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ। গত কয়েকদিন টানা বাড়া এম আই সিমেন্টের দাম কমেছে ৬ দশমিক ০২৮ শতাংশ।