প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এখন থেকে কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদনের আগের দুই হিসাব বছরে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোনো মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না। তবে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে ইচ্ছুক কোম্পানিগুলো আইপিও অনুমোদনের আগে আইপিওর জন্য নির্ধারিত অংশ থেকে ১৫ শতাংশ শেয়ার আলাদা করে রাখতে পারবে এবং এই শেয়ারগুলো আইপিও অনুমোদনের আগে যে কারও কাছে বিক্রি করতে পারবে। আইপিওতে এমন পরিবর্তন এনে নতুন নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে কমিশন।
প্লেসমেন্ট ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে এবং আইপিও প্রক্রিয়া সহজ ও সময় কমিয়ে আনতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কমিশন এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে এবং শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
আইপিওসংক্রান্ত বিষয়ে এসইসির নতুন যে নির্দেশনা আসতে যাচ্ছে, তাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা প্লেসমেন্ট শেয়ারের বিদ্যমান লক-ইন পিরিয়ড (বিক্রয় বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা) বিদ্যমান দুই বছর থেকে কমিয়ে এক বছরে নামিয়ে আনা হবে। নতুন নির্দেশনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওতে কোটা বাড়ানো হচ্ছে।
বর্তমানে আইপিওর আবেদন করা কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের আগেই প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আইপিওতে যে পরিমাণের অর্থ সংগ্রহ করে, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করা হয় প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে। এতে করে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কোম্পানির প্রকৃত আকারের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এর আগের কমিশন প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়ায় সমালোচিত হয়েছিল। এসইসির নতুন নিয়মের মাধ্যমে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা যাবে।
এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে ইচ্ছুক কোম্পানিকে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে মোট আইপিও আকারের ১৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি কমিশনের কাছ থেকে প্রাথমিক অনুমোদন নিতে হবে এবং এই শেয়ার কোম্পানিগুলো যে কারও কাছে বিক্রি করতে পারবে। তবে প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার ফলে কোম্পানির আইপিও অনুমোদন অনেকটাই নিশ্চিত হওয়ার এই ১৫ শতাংশ শেয়ার দর অস্বাভাবিক পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। অবশিষ্ট ৮৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ ও যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমের মাধ্যমে প্রো-রাটা ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ১০ কোটি শেয়ার ইস্যু করতে চায়, তবে আইপিও অনুমোদনের আগে দেড় কোটি শেয়ার ইস্যু করার জন্য যে কারও কাছ থেকে শেয়ারের অর্থ জমা নিতে পারে। এই শেয়ারগুলো আইপিওর একটি অংশ হবে। অবশিষ্ট সাড়ে ৮ কোটি শেয়ারের মধ্যে ৬৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী, ৫ শতাংশ অনাবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি), ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড ও ২০ শতাংশ যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
বর্তমান আইন অনুসারে স্থির মূল্যে আইপিওতে আসা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ থাকে, যার ১০ শতাংশ আবার এনআরবিদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। আর এই পদ্ধতিতে আসার আইপিও শেয়ারের মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হয়, যার মধ্য থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্য ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ করে শেয়ার বরাদ্দ থাকে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আইপিওতে যেসব পরিবর্তন আসছে, তা দ্রুত নির্দেশনা আকারে জারি করতে যাচ্ছে কমিশন। নতুন নির্দেশনায়, আইপিওর আবেদন করা কোম্পানি সর্বশেষ দুই হিসাব বছরে কোনো প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হবে না।
এর আগে সব আবেদনকারীর জন্য আইপিও শেয়ার নিশ্চিত করতে লটারি পদ্ধতি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া আইপিও শেয়ার পেতে হলে ব্যক্তিশ্রেণির আবেদনকারীকে সেকেন্ডারি বাজারে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকা বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। আর প্রতিটি আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণ ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে পুঁজিবাজারে নতুন করে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ আসবে বলে কমিশন মনে করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নামে অধিক সংখ্যক বিও হিসাব খোলার প্রবণতাও বন্ধ হবে।