করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের সিমেন্ট খাত। এতে লোকসান কাটিয়ে আবারও মুনাফায় ফিরতে শুরু করেছে এ খাতের কোম্পানিগুলো। যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারেও। তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের দেশীয় কোম্পানিগুলো যে অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ওয়েবসাইটে আজ রোববার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে ক্রাউন সিমেন্ট তথা এমআই সিমেন্টের। ২০২০ সালের শেষার্ধে (জুলাই–ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বা মুনাফা বেড়েছে ২০৭ শতাংশ। ২০১৯ সালের জুলাই–ডিসেম্বর সময়কালে এমআই সিমেন্টের ইপিএস ছিল প্রায় দুই টাকা ঋণাত্মক। আর ২০২০ সালের শেষার্ধে এসে এ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৩ পয়সায়। অর্থাৎ ২০১৯ সালের ছয় মাসে কোম্পানিটির আয় যেখানে ঋণাত্মক ছিল, সেখানে করোনার বছরে সেই আয় ফিরেছে ইতিবাচক ধারায়। শুধু ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে তা নয়, মুনাফা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০০ শতাংশের বেশি। এ খবরে আজ রোববার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল।
ঢাকার বাজারে রোববার দিন শেষে এমআই সিমেন্টের শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ বা পৌনে ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ টাকা ১০ পয়সায়। তাতে এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির প্রথম অবস্থানে ছিল কোম্পানিটি।
করোনার বছরে ব্যবসার এমন চমক দেখানো উত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে এমআই সিমেন্টের প্রধান উপদেষ্টা মাসুদ খান বলেন, ‘বেশ কয়েকটি কারণে আমাদের ব্যবসায় করোনার মধ্যেও ম্যাজিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রথমত আমাদের বিক্রিতে ৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে তেল ও সিমেন্টের কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ার সুফলও আমরা পেয়েছি। পাশাপাশি করোনার সময়ে আমাদের ব্যবসার খরচও অনেক কমেছে। সরকারের প্রণোদনা সুবিধার কারণে কমে গেছে সুদবাবদ খরচও। সব মিলিয়ে তাই আমাদের মুনাফায় ম্যাজিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ধারা আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’
করোনার বছরে আয় বৃদ্ধির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল প্রিমিয়ার সিমেন্ট। সদ্য বিদায়ী বছরের শেষ ভাগে এসে কোম্পানিটির আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালের শেষ ছয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ১৬ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ৫১ পয়সায়। অর্থাৎ করোনার মধ্যেও আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি আয় বেড়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের।
জানতে চাইলে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীরুল হক বলেন, ‘করোনার মধ্যেও আমাদের উৎপাদন কার্যক্রম সচল ছিল। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে আমরা আমাদের পণ্য সরবরাহ করে থাকি। করোনার মধ্যেও তা অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া আমরা ব্যবসার খরচও অনেক কমিয়েছি। যার সুফল মুনাফায় পড়েছে।’
এ ছাড়া তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে আরামিট সিমেন্টের মুনাফা ৯১ শতাংশ, কনফিডেন্স সিমেন্টের মুনাফা ৫৭ শতাংশ ও মেঘনা সিমেন্টের মুনাফা ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকার বাজারে সিমেন্ট খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৭টি। এর মধ্যে ৫টি দেশি কোম্পানি। আর দুটি বহুজাতিক, সেগুলো হলো হাইডেলবার্গ ও লাফার্জহোলসিম।
দেশীয় কোম্পানিগুলোর আর্থিক বছর জুন–জুলাইভিত্তিক। আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আর্থিক বছর জানুয়ারি–ডিসেম্বরভিত্তিক। ডিসেম্বরে আর্থিক বছর শেষ হওয়ায় বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর এখন অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সুযোগ নেই। তাই হাইডেলবার্গ ও লাফার্জহোলসিমের ডিসেম্বর শেষের হালনাগাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।