পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডসের (বিডি ওয়েল্ডিং) পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চার বছরেরও বেশি সময়ে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির উন্নয়নে ব্যর্থ হওয়ায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। বিগত দুই হিসাব বছরের আর্থিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয় নিরীক্ষার জন্য বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (বিএসইসি)।
এসইসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এসইসির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৪ মে থেকে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে। এরপর ৪ বছর ৭ মাস ৩ দিনেও কোম্পানিটির কোনো উন্নতি হয়নি। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির পর্ষদ ব্যর্থ হয়েছে। এ জাতীয় কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা জারি করে কমিশন।
‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর জারিকৃত বিএসইসির ওই নির্দেশনার ২-এ বলা হয়েছে, এই ক্যাটাগরিতে পতিত হওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। এই পুনর্গঠনে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন এবং কমিশন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটিতে ২ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।
চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, ২০১৯ সালে কোনো মুনাফা ছাড়াই ১ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে বিডিওয়েল্ডিং, যা সিকিউরিটিজ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিডি ওয়েল্ডিং ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে ২৪৯ ডেসিমাল জমি ও কারখানা ভবন ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এক্ষেত্রে প্রতি ডেসিমাল ১৬ লাখ ২৬১ টাকায় বিক্রি দেখানো হয়। যদিও পূর্ব নাসিরাবাদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ওই এলাকার প্রতি ডেসিমাল জমির মূল্য ২১ লাখ ৭৪ হাজার ১২৭ টাকা। চুক্তি মূল্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি ২৩ কোটি ৮০ লাখ ৭২ হাজার টাকা গ্রহণ স্থায়ী সম্পদ বিক্রি বাবদ নগদে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে হিসাবে গরমিল স্পষ্ট হয়েছে। একই সময়ে কোম্পানির ব্যালেন্স শিটে
এদিকে ব্যালেন্স শিটে ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ‘ল্যান্ড অ্যান্ড বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন হেল্ড ফর সেল’ দেখানো সত্ত্বেও ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে ৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা দেখিয়ে বিভ্রান্তকর তথ্য প্রকাশ করেছে বিডি ওয়েল্ডিং। এক্ষেত্রে যদি জমি ও ভবন বিক্রি না করে থাকে, তাহলে ক্যাপিটাল গেইনের মিথ্যা তথ্য বা বিক্রি করে থাকলে, ব্যালেন্স শিটে জমি ও ভবনবাবদ সম্পদ দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএসইসির চিঠিতে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের স্থায়ী সম্পদ, মজুদ পণ্য, দেনাদার, বিলম্বিত কর নিয়ে নিরীক্ষকের আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওইসব সম্পদের বিষয়ে কোনো প্রমাণাদি সরবরাহ না করার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। এতে করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসেবে সম্পদের অসত্য তথ্য সরবরাহ করে থাকতে পারে বলে মনে করছে কমিশন। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩২ লঙ্ঘন করে প্রিলিমিনারি ব্যয়, আইপিও ব্যয়, আয়ের অবরাদ্দকৃত ব্যয়, সুদ ইত্যাদিকে বিলম্বিত ব্যয় (ডেফার্ড এক্সপেন্স) হিসেবে দেখিয়েছে। আর কোম্পানিটিতে অদাবিকৃত ৩৩ লাখ টাকার লভ্যাংশ থাকলেও প্রদানের সক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছে কমিশন।
এই কোম্পানিটিতে ৬৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়াকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকারক ও কমিশনের কাছে অপ্রত্যাশিত বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব বিবেচনায় বিডি ওয়েল্ডিংয়ের সর্বশেষ ২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবসহ (২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০) নিরীক্ষার জন্য কমিশন বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ব্যয়ভার বহন করবে কোম্পানি। একই সঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে নিরীক্ষকের চাহিদা অনুযায়ী সহযোগিতা করতে হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
অন্যদিকে কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোম্পানির কোনো সম্পদ বিক্রি, বন্ধক, হস্তান্তর বা নিষ্পত্তি করা যাবে না বলে জানিয়েছে এসইসি।