তালিকাভুক্তির পর থেকে টানা বাড়ছে রবির শেয়ার দর। ভারত থেকে করোনার টিকা আসার খবরে বাড়ছে বেক্সিমকো ফার্মা ও বেক্সিমকো লিমিটেড। বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেক্সিমকোর বিনিয়োগের খবরেও চাঙ্গা হয়েছে কোম্পানি। নতুন বছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে লেনদেনের শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছ তিন কোম্পানি। বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সিমকো ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড এবং নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি রবি।
তালিকাভুক্তির পর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় ছিল রবি। হলট্রেড হয়েছে প্রতিদিনই। অর্থাৎ একদিনে যতটুকু বাড়া সম্ভব, দাম বেড়েছে ততটুকু। ১৩ কেবল একদিন জানুয়ারি শুধু হলট্রেড হয়নি। অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে, এমন কোম্পানির বিষয়ে তদন্তের খবরে একদিন দাম উঠানামা করলেও শেষ পর্যন্ত চার শতাংশ বাড়ে সেদিন।
তবে চিঠি প্রত্যাহারের খবরে একদিন পর আবার হলট্রেড। ৭০ টাকার ঘর অতিক্রম করে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এই কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। এই তালিকায় আছে বেক্সিমকো লিমিটেড।
কোম্পানিটির শেয়ারের দর বৃদ্ধি শুরু হয় মূলত করোনা ভ্যাকসিন বাংলাদেশ আনতে ভারতের সঙ্গে চুক্তির পর থেকে। বেক্সিমকোর মাধ্যমে আসছে করোনা ভ্যাকসিন। এই খবরে চাঙ্গা হতে থাকে তালিকাভুক্ত এই গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড এবং বেক্সিমকোফার্মা।
২৫ নভেম্বর ২০২০ থেকে মূলত বেক্সিমকোর শেয়ার দামের উপর প্রভাব পড়তে থাকে আরও একটি কারণে। বিদ্যুৎ কোম্পানিতে ৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের খবর আরও বাড়াচ্ছে দর। ১৪ জানুযারি পর্যন্ত ২১ কার্যদিবসে শেয়ার প্রতি ৫৫ টাকার বেশির দর বেড়ে হয়েছে ৭৯ টাকা।
বেক্সিমকো ফার্মার ক্ষেত্রে শেয়ার দরের উত্থান পতন থাকলেও দাম বেড়েছে। এই কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে মূলত ১৫ অক্টোবর থেকে। সে সময় শেয়ার প্রতি দর ছিল ১১০ টাকা। ১৪ জানুয়ারি শেষে সেই দর এসে পৌঁছেছে ২১০ টাকায়।
বৃহস্পতিবার টাকা অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। এদিন কোম্পানিটির দুই কোটি ১০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮৪ কোটি টাকায়। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো ফার্মা, কোম্পানিটির ৬০ লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৩ কোটি টাকায়। তৃতীয় অবস্থানে ছিল রবি, যার এক কোটি ৩৯ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৭ কোটি টাকায়। তারপরের অবস্থানে ছিল সামিট পাওয়ার, লাফার্জ হোলসিম।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক পদক্ষেপে বুধবার বদলে গিয়েছিল পুঁজিবাজারের উত্থান।শেয়ার দর, লেনদেন, শেয়ার প্রতি আয় ও মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের আগে ও পরের দরের অস্বাভাবিক উত্থান বা পতন হয়েছে এমন কোম্পানিগুলোকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল দুই স্টক এক্সচেঞ্জেকে।
এমন নির্দেশনার পর বুধবার শেয়ার বিক্রির চাপে তলানিতে নেমে আসে সূচক।সেদিনই সিদ্ধান্ত বদল করে তদন্ত থেকে সরে আসে বিএসইসি। তার পরদিন বৃহস্পতিবার বদলে যায় লেনদেন চিত্র। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কিছুটা কমলেও সূচক বেড়েছে ১৩৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমলেও টানা দ্বিতীয় দিন দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন দেখে ডিএসই। লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
উল্লেখিত কোম্পানিগুলো ছাড়াও বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় যোগ হয়েছিল তালিকাভুক্ত জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে জিবিবি পাওয়ারের দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। পাওয়ারগ্রিড লিমিটেডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাইফ পাওয়ার টেকের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং সামিট পাওয়ার লিমিটেডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে বিএসইসি যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে অতিমূল্যায়িত শেয়ারের বিষয়ে তদন্ত সব সময়ই হয়েছে।
তারা বলছেন, বিএসইসি সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজারের পতন হয়েছিল এটা ঠিক না। পুঁজিবাজারের অনেক শেয়ার এখন অতিমূল্যায়িত। কিন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় আবার সেই শেয়ারগুলোর দাম বেড়েছে, যা কাম্য নয়।