সুখবর দিয়েই শুরু করছি। দীর্ঘ দুই বছর পর মাসিক ভিত্তিতে ফরেইন হোল্ডিং এর পরিমাণ ৬.৫৮% বেড়েছে। মূলত বিদেশি হোল্ডিং কমে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থাও তলানীতে ঠেকেছিল। ফ্লোর প্রাইস সহ একের পর এক পদক্ষেপের কারণে ইতিমধ্যে বাজারের প্রতি পুরাতন বিনিয়োগকারীদের আস্থা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি প্রতিদিনই বাজারে যুক্ত হচ্ছে নতুন বিনিয়োগকারী। এ পর্যন্ত প্রকাশিত ২৪৯ টির মধ্যে ১৩৪ টির প্রাতিষ্ঠানিক হোল্ডিং বেড়েছে এবং ৮১ টির কমেছে। উল্লেখ্য কয়েকটি কোম্পানীতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়গকারীদেরর অংশ উদ্যোক্তা বা বিদেশি হোল্ডিং এ যুক্ত হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক হোল্ডিং কমেছে ২.৫৭%। গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বর মাসেও উদ্যোক্তাদের হোল্ডিং বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। অন্যদিকে ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে পাবলিক হোল্ডিং। ডিসেম্বরে পাবলিক হোল্ডিং কমেছে ১.০৩%। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ইন্সটিটিউট ও পাবলিক হোল্ডিং বাড়ানোর চেয়ে প্রফিট টেকিং এ অধিক মনযোগি। উদ্যোক্তা ও বিদেশিদের হোল্ডিং বৃদ্ধি বাজারে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উত্থানের ইংগিতকে আরো জোরদার করছে।
সমাপ্ত সপ্তাহের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ফ্লোরে লেনদেন বৃদ্ধি এবং ফ্লোর থেকে অনেক স্ক্রিপ্টের উঠে আসা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ফ্লোরে ক্লোজ হয়েছিল ৪৬ টি, যা এ সপ্তাহে ৩২ টিতে নেমে এসেছে। এ দলে যেমন আরো কিছু শেয়ার যুক্ত হতে পারে, তেমনি কিছু শেয়ার আর ফ্লোরে ফিরে না যাবার লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে। প্রফিট টেকাররা ঝুঁকি কমানোর জন্য ফ্লোরের প্রতি মনযোগী হচ্ছে বলে ধারণা করা যায়। আশা করা যায় আইপিওর জন্য মিনিমাম বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতার কারণে মার্চের মধ্যে কোন শেয়ারই ফ্লোরে থাকবেনা। এটি আরো আগে হলেও অবাক হব না। আইপিও ব্যবসায়ীদের অনেকেই রবির প্রফিটের টাকায় ফ্লোর থেকে বিশ হাজার টাকার শেয়ার কিনে রাখার কথা ভাবতে শুরু করেছে। কারণ ফ্লোর রেইটে শেয়ার পেলে সেটার বাজার মূল্য সমন্বয়ের প্রয়োজনতো হবেইনা, উপরন্তু ঝুঁকিবিহীন নিশ্চিত মুনাফা আসবেই।
আগামী সপ্তাহ জুড়েই রবি বাজার লিড দিতে পারে। গত সেশনের সম্ভাব্য বিশাল সেল প্রেসারের এসিড টেস্ট উতরাতে পারায় রবি হোল্ডাররা আরো কনফিডেন্ট হয়ে উঠেছে। তবে আইপিও ব্যবসায়ীদের হুট করে আটকে যাওয়ার সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কোন শেয়ারের দাম শুধু বাড়বেই না, কমবেই– এটা অবধারিত। কিছুদিন আগে লোকেপ ইউনিলিভার থেকে লেসন না নিলে বড় ধরণের মুনাফা খোয়ানোর মুখে পড়তে হতে পারে। তবে যারা এক দুই লট পেয়েছেন তাদের রবির দিকে না তাকানোই উত্তম। ইন্সুরেন্স হোল্ডাররা হতাশা নিয়ে সুদিনের অপেক্ষায় আছে। একটু বেড়েই সেল প্রেসারে নেমে যাচ্ছে। এর মাঝেও কিছু ইন্সুরেন্স মুনাফা দিয়েছে এবং বেশিরভাগই কারেকশনে আছে। সমাপ্ত সপ্তাহে সেক্টর ও বেশ কিছু শেয়ার ঘুরে দাড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় ফান্ডামেন্টালি স্ট্রং গ্রীনডেল্টা, পাইওনিয়ার ইত্যাদিতে পজিশন নিতে পারেন। জেনারেলে কিছুটা দ্বীধা দ্বন্ধ থাকলেও লাইফ এগিয়ে যাচ্ছে। লোকেপ এবং শেয়ার প্রতি সর্বোচ্চ লাইফ ফান্ডের কারণে মেঘনার দিকে হাত বাড়াতে পারেন।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডও অনেককে হতাশ করছে। দল বেঁধে সম্ভবনা দেখিয়ে আবার রেকশনে চলে যাচ্ছে। সম্ভবত বড় হোল্ডাররা ধীরে ধীরে কালেকশন করছে এবং ছোটরা ছেড়ে দিচ্ছে। বাজার ভালো হবে নিশ্চিত থাকলে দেখেশুনে কিছু ফান্ড কালেকশনে রাখা যেতে পারে। রুবানা গংরা কিস্তির টাকা না দেয়ার উছিলা এবং আবার প্রনোদনা বাগিয়ে নেয়ার জন্য আগের মতই গার্মেন্টস সেকটর নিয়ে প্যাণিক দিয়েছেন। আগেরবার যেমন বাস্তবতা ভিন্ন ছিল, এবারও তাই হবে এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন। তাই টেক্সটাইল নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তবে সুতার চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধিরত কারণে স্পিনিং সেকটর আরো ভালো করবে। বেছে নিতে পারেন মেকসন ও মেট্রো। ফ্লোরে থাকা সায়হাম কটনেও নজর দিতে পারেন কেপগুলি বরাবরের মত একটি রেঞ্জিং করে কালেকশন ও প্রফিট টেকিং চলছে। শেয়ার ভেধে আরো কিছুটা কারেকশন হতেও পারে বা স্লো থাকতে পারে। যারা প্রফিট টেক করেছেন তারা দেখেশুনে কালেকশন শুরু করতে পারেন।
ফার্মা নিঃসন্দেহে কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে বড় ফার্মাগুলি ভালো প্রফিট দিয়েছে। সপ্তাহ শেষে ছোট ও ফ্লোরে থাকা ফার্মাগুলি ভলিউম নিয়ে ফ্লোরের উপরে চলে এসেছে। সামনে এগুলি ভালো করবে বলে আশা করা যায়। এক্ষেত্রে প্রফিটিবিলিটি, ব্যবস্থাপনা ও ভলিউম বিবেচনায় সিলভা ফার্মা এগিয়ে রাখব। ইঞ্জিনিয়ারিং সেকটরের কিছু শেয়ার কারেকশনের শেষ ধাপে রয়েছে এবং উঠে আসার চেষ্টা করছে। যেমন আনোয়ার, বিডিল্যাম্পস ইত্যাদি। লম্বা কারেকশন শেষে আইটি সেকটর লাস্ট দুই সেসনে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টায় আছে। আগ্রহীরা পজিশন নিতে পারেন। আইটি সেকটরের বিশাল সম্ভবনা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। সমস্যা হচ্ছে পূঁজিবাজারে একমাত্র জেনেক্সিল ছাড়া ডেডিকেটেড আইটি কোম্পানীর অনুপস্তিতি।
সমাপ্ত সপ্তাহের শুরুতে জ্বালানী খাত বৃদ্ধি আশা জাগালেও বাজার স্লো থাকায় সপ্তাহ শেষে বৃদ্ধিটা ধরে রাখতে পারেনি। সূচক ঘুরে দাড়ালে সেকটরটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে সন্দেহ নেই। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোন সেকটরে নতুন শেয়ার আসলে সেকটরের অন্যান্য কোম্পানীগুলি স্লো হয়ে যায়। অথচ পূর্বে বিপরীত চিত্রই দেখা যেত। সিমেন্ট খাত মূলত লাফার্জ নির্ভর। একদিন দুদিন কারেকশন হয়েই আবার বাড়ছে। নতুন প্রোডাক্টের কারণে প্রতিযোগীদের তুলনায় মুনাফা এগিয়ে থাকবে এ প্রত্যাশায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছে চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
সরকারি ও মাল্টিগুলি নতুন করে সম্ভবনা জাগিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে পাওয়ারগ্রীড, সাবমেরিন ও বিএসসি। লোকেপ ইলুবের সবচেয়ে লাভজনক প্রোডাক্ট বেস ওয়েল হিসাবে না আসায় এ বছরের ইপিএস খারাপ এসেছে। তবে নতুন প্রোডাক্ট বিটুমিন যোগ হওয়ায় প্রান্তিকের আয় বেড়েছে। আশা করা যায়, গত বছরের তুওলনায় এ বছর আয় চার-পাচ গুণ বাড়বে। এখন ব্যাংকের সময়। সামান্য কারেকশন হলেও তেমন কমার সম্ভবনা নেই। বর্তমান মূল্য থেকে সবগুলিরই দাম বাড়বে। তাই বিশেষভাবে কোনটির নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছিনা।
বাজারে সবচেয়ে ট্রেন্ডি পজিশনে রয়েছে ফাইনান্স। প্রতিদিনই কারেকশনের ঝুঁকি নিয়ে সেসনের ভিতরেই কারেকশন হয়ে আবার এগিয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বর ক্লোজিং বলে বড় ধরণের কারেকশনের সম্ভবনা দেখা যাচ্ছেনা। ইতিমধ্যে প্রায় সবকটির দামই ২০-৬০ ভাগ বেড়েছে। দীর্ঘ মেয়াদের জন্য আইসিবি কালেকশন করতে পারেন। সম্প্রতিক কমিশন ঘোষিত অদাবীকৃত লভ্যাংশের টাকায় গঠিত ফান্ডের পরিচালনার দায়িত্ব পাবে আইসিবি। সেই সাথে আই্বিসির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বল্প সুদে পূজির ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া বাজারের সম্ভবনার সাথে আইসিবির সম্ভবনা ওতপ্রতভাবে জড়িত। এছাড়া আইডিএলসি, ন্যাশনাল। ছোটগুলির মধ্যে আইএলএফ। লংকাবাংলাতো লিডিং পজিশনেই রয়েছে।
সূচক নিয়ে কিছু না বললে প্রশ্ন থেকে যাবে। বাজারকে এখন আর স্টেরিওটাইপ বিশ্লেষণ করে কাংক্ষিত ফল পাওয়া যাবেনা। সমাপ্ত সপ্তাহে আমরা দেখেছি দিন শেষে কারেকশনের চেয়ে সেসনের ভিতরেই কারেকশন হচ্ছে। এটিই স্মার্ট কারেকশন। তাই বেহুদা সাপোর্ট খুঁজে লাভ নেই। বড় কোন কারেকশনের সম্ভবনা নেই, বড়জোর স্লো থাকবে। বাজার ব্যবসা দিয়ে যাবে। যেগুলি বেড়েছিল সেগুলি কারেকশন হচ্ছে, আর যেগুলি কমেছিল সেগুলি বাড়বে। তবে যেগুলি বেড়েছিল সেগুলির ইন্ডেক্স মুভিং ক্যাপাসিটি বেশি থাকায় সূচক দ্রুত বেড়েছিল। এখন যেগুলি বাড়ছে সেগুলির ইনডেক্স মুভিং ক্ষমতা কম বলে সূচককে দ্রুত এগিয়ে নেয়ার সূযোগ কম।
সকলের জন্য শুভ কামনা নিরন্তর।