যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় বাংলাদেশের স্টার্টআপ কোম্পানি শপআপ। আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের নাসডাক সূচকভুক্ত হতে চায় কোম্পানিটি। সে লক্ষ্যে যা যা করা দরকার, এ সময়ের মধ্যে তারা সেটা করে ফেলতে চায়।
শপআপে এখন পর্যন্ত যে বিনিয়োগ এসেছে, তার ৬৫ শতাংশ উত্তর আমেরিকার। এ বাস্তবতায় উত্তর আমেরিকার শেয়ারধারীদের শপআপের শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত হওয়া জরুরি বলে মনে করে দেশের এই অন্যতম বৃহৎ স্টার্টআপ। নাসডাকে তালিকাভুক্ত হলে দেশের বাজার সম্পর্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হবেন; দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়বে।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আজ রোববার শপআপ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন শপআপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আফিফ জামান, প্রেসিডেন্ট মামুন রশীদ, প্রধান পণ্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান চৌধুরী, প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা সুজায়েত আলী প্রমুখ।
শপআপের প্রতিষ্ঠাতা আফিফ জামান কোম্পানির ব্যবসার ধরন ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এমন সময় আসবে, যখন পণ্য বিতরণ ব্যবসার বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। দেশের কোম্পানিগুলো এখন বড় হচ্ছে; গ্রাহক বাড়ছে—এ বাস্তবতায় তাদের পক্ষে শতভাগ পণ্য বিতরণ করা সম্ভব হবে না। বিষয়টি উত্তর আমেরিকার বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পেরেছেন এবং সে জন্যই তাঁরা শপআপে বিনিয়োগ করছেন। আমরা এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক পরিসরে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। নাসডাকে তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা সে লক্ষ্যেই।’
শপআপের প্রেসিডেন্ট মামুন রশীদ বলেন, দেশের বড় কোম্পানিগুলো এখন বিতরণব্যবস্থা ভার্চ্যুয়াল করার চিন্তা করছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে শপআপ গত ছয় বছরে অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু দেশে অর্থায়ন পাওয়া বড় এক সমস্যা, বিশেষ করে স্টার্টআপগুলোতে ব্যাংক খুব একটা ঋণ দেয় না। আবার বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা কঠিন কাজ। বিদেশে কোনো বিনিয়োগকারীর কাছে ৩০ পৃষ্ঠার প্রেজেন্টেশন দিলে ২৬ পৃষ্ঠা লিখতে হয়, কেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা সম্ভব, অর্থাৎ তাদের বোঝাতেই বড় সময় চলে যায়। এসব সমস্যা মোকাবিলা করেই শপআপ এগোচ্ছে।
দেশের স্টার্টআপ খাতে গত কয়েক বছরে বিনিয়োগপ্রবাহ কমেছে, কী কারণে তা কমছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আফিফ জামান বলেন, সারা বিশ্বেই এখন এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ মাধ্যমে বিনিয়োগ করছেন, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিল ও বন্ড। এসব মাধ্যমে নিরাপদে বেশি সুদ পাওয়া গেলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চান না। এ কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে শপআপ। দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯৩টি থানার ছোট দোকানিদের কাছে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে তারা। সে জন্য তারা বিশাল লজিস্টিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। দেশের বৃহত্তম বিতরণ নেটওয়ার্ক এখন তাদের।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপ কোম্পানি শপআপের একটি শাখা ২০২৩ সালেই পরিচালন মুনাফায় চলে আসে। চলতি বছর সেই ইউনিট নিট মুনাফা অর্জন করেছে