শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জেনেক্স ইনফোসিস ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর কাজ পেয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেই জেনেক্স ইনফোসিসের কর্ণধাররাই আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন।
এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা কোটি টাকা লেনদেন করলেও আয়কর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। আয়কর বিভাগ থেকে তাগাদা দিলেও তারা কর্ণপাত করেননি। আবার কেউ রিটার্ন জমা দিলেও প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির তথ্য প্রদর্শন করেননি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগও আছে।
জেনেক্স ইনফোসিসের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসির পরিচালক। তার বাবা চৌধুরী ফজলে ইমাম প্রতিষ্ঠানটির একজন পরিচালক। ফজলে ইমাম ২০২২ সালে এনবিআর-এর সঙ্গে ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস মেশিন বসানোর চুক্তি স্বাক্ষর করেন। শেয়ারবাজারে কোটি টাকা লেনদেন রয়েছে। অথচ তিনি আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ মে উত্তরার ঠিকানায় এনবিআর-এর কর অঞ্চল-৫-এর সার্কেল ৯৬ থেকে ফজলে ইমামকে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে বলা হয়, আয়কর আইনের ১৭৭ ধারা অনুযায়ী ২০২৩-২৪ করবর্ষে রিটার্ন জমা দেননি। এই সময় প্রদেয় কর পরিশোধ এড়িয়ে গেছেন এবং ফাঁকি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য, দলিলাদি ও রেকর্ড সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে কেন জরিমানা করা হবে না, এর উপযুক্ত জবাব দিতে ২৮ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
কিন্তু নোটিশ প্রেরণের এক মাস পার হলেও অদ্যাবধি ফজলে ইমাম রিটার্ন জমা দেননি। রিটার্ন না দেওয়ার তালিকায় আরও আছেন ফজলে ইমামের মেয়ে জাহারা রসুল, আদনান ইমামের স্ত্রী নাদিয়া মমিন ইমাম এবং নাসরিন আলী।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, লোকবলের অভাবে ২০২২ সালে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের সঙ্গে ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস মেশিন বসানোর চুক্তি করে এনবিআর। এর আওতায় ইএফডি যন্ত্র আমদানি, দোকানে বসানো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
চুক্তির আওতায় আগামী পাঁচ বছরে তিন লাখ ইএফডি বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে ইএফডি মেশিন বসাবে। বিনিময়ে প্রতি ১০০ টাকা ভ্যাট আদায় করে ঢাকায় ৫২ পয়সা এবং চট্টগ্রামে ৫৩ পয়সা কমিশন পাবে।
কিন্তু চুক্তির দেড় বছর পার করলেও জেনেক্স ইনফোসিস ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস মেশিন বসানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারেনি। রাজধানীর কিছু দোকানে ইএফডি মেশিন বসানো হলেও তা ব্যবহার করতে চান না ক্রেতা-বিক্রেতারা। কিছু মেশিন নষ্ট হয়ে গেলেও মেরামত করা হচ্ছে না।
২০১৯ সালে জেনেক্স ইনফোসিস শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। শেয়ারটি নিয়ে কোম্পানির উদ্যোক্তরা তালিকাভুক্তির পর কয়েক বার কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শেয়ারটি কারসাজির দায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা উদ্যেক্তা পরিচালকদের জরিমানাও করেছেন।
গত বছর ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস মেশিন বসানোর খবরে শেয়ারবাজারে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারের দাম হুহু করে বেড়ে যায়। এই সুযোগে ফজলে ইমামের মেয়ে জাহারা রসুল ও জামাতা আমের রসুল প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করেন। যা আয়কর রিটার্নে তারা দেখাননি। অন্যদিকে জেনেক্স ইনফোসিসেস চেয়ারম্যান আদনান ইমামের স্ত্রী নাদিয়া মমিন ইমাম ও নিলুফার ইমাম প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেননি।
এর আগে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নিরীক্ষায় জেনেক্স ইনফোসিসের বিরুদ্ধে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা উৎসে ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে আপত্তি না জানিয়ে ভুল স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং দাবিকৃত ভ্যাট পরিশোধ করে।