প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও গতিশীলতা বাড়াতে সাত দফা প্রস্তাব জানিয়েছে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী বরাবর এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে শেয়ারবাজারের অবস্থা খুবই নাজুক। গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। দেশের অগ্রযাত্রা, প্রবৃদ্ধি অর্জন ও উন্নয়নে এই বাজেট অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজার উন্নয়নে বেশকিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানায় এবং চূড়ান্ত বাজেটে নিম্নলিখিত দাবিগুলো সংযোজন করার জোর দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো-
০১. ক্যাপিটাল গেইনের উপর কর প্রত্যাহার
শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকার উপর ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি। এতে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা আরও বেশী বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে।
০২. ডিভিডেন্ডের উপর ট্যাক্স প্রত্যাহার
ডিভিডেন্ডের উপর থেকে ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড ঘোষণার পূর্বে সরকারকে অগ্রীম যে ট্যাক্স প্রদান করে থাকে। সেটাকে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসাবে গণ্য করতে হবে। তাহলে ভালো ডিভিডেন্ড পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে এবং অস্থিরতা কমবে।
০৩. কর হারের ব্যবধান
শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানি ও অতালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যকার করহারের ব্যবধান মাত্র ৫ শতাংশ। চূড়ান্ত বাজেটে এই হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ করতে হবে। এতে ভালোমানের কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত হবে।
০৪. কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো
তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট ট্যাক্স ১৫ শতাংশ করতে হবে। এর ফলে বহু ভালোমানের স্বনামধন্য কোম্পানি, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত হবে।
০৫. অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ
অপ্রদর্শিত অর্থ সহজ শর্তে শুধু শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। শেয়ারবাজার গতিশীল হবে, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে এবং সরকারও প্রচুর রাজস্ব পাবে।
০৬. উপযুক্ত ডিভিডেন্ড প্রদান
শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত অনেক কোম্পানি ভালো মুনাফা অর্জন করা স্বত্ত্বেও উপযুক্ত ডিভিডেন্ড প্রদানে গড়িমসি করে। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ডিভিডেন্ড হিসাবে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। উপযুক্ত ডিভিডেন্ড পাওয়ার প্রত্যাশায় শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়বে এবং শেয়ারবাজারও স্থিতিশীল হবে।
০৭. অর্থের যোগান
বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। এতে শেয়ারবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে এবং শেয়ারবাজারের এই দুঃসময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দিতে সক্ষম হবে।
চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে মহাধসের কবলে পড়ে বহু বিনিয়োগকারী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ৩৭ জন বিনিয়োগকারী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন। শেয়ারবাজারের পতনের দায় তখন সরকারের উপর পড়েছিল। এরপর থেকে আর শেয়ারবাজার পূর্ণাঙ্গ স্থায়ী স্থিতিশীলতা পায়নি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও শেয়ারবাজারের মন্দাভাবের কারনে তা বারবার ম্লান হচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারবাজার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কোনভাবেই শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতা পায়নি। শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় করতে হলে আলোচ্য প্রস্তাব প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করা জরুরী বলে মনে করে বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।