পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডকে (পিজিসিবি) ২৫০ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৯৭৬টি অগ্রাধিকারমূলক (প্রেফারেন্স) শেয়ার ইস্যুর জন্য সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এ শেয়ার সচিব বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকূলে ইস্যু করা হবে। এর আগে বিএসইসির ৯১০তম কমিশন সভায় পাওয়ার গ্রিডের অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।
অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে বিএসইসির কাছ থেকে সম্মতি পাওয়ার বিষয়টি মূল্যসংবেদনশীল তথ্যের মাধ্যমে জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড। এতে বলা হয়েছে কোম্পানিটির উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকার কর্তৃক ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইকুইটি হিসেবে দেয়া ডিপোজিট ফর শেয়ার খাতে জমাকৃত মোট ২ হাজার ৫০৫ কোটি ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬০ টাকার বিপরীতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২৫০ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৯৭৬টি অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার সচিব বিদ্যুৎ বিভাগের নামে ইস্যুর জন্য গত ১৩ জুন বিএসইসির সম্মতি পাওয়া গেছে। এর আগে এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পাওয়ার গ্রিডের বার্ষিক সাধারণ সভায় অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির কাছে সম্মতি চাওয়া হয়েছিল।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পিজিসিবিকে ইকুইটি ও ঋণ হিসেবে সময়ে সময়ে অর্থ দেয় সরকার। ইকুইটি হিসেবে নেয়া অর্থ কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে রয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা অনুসারে, মূলধন খাতে প্রাপ্ত অর্থ, যা শেয়ার মানি ডিপোজিট বা অন্য কোনো নামে কোম্পানির মূলধন বা ইকুইটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা কোনোভাবেই প্রত্যাহার বা ফেরত নেয়া যাবে না। এ খাতে প্রাপ্ত অর্থ সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আইনগতভাবে মূলধনে রূপান্তর করতে হবে অর্থাৎ যার কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়েছে তাকে শেয়ার ইস্যু করতে হবে। এছাড়া মূলধনে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত শেয়ার মানি ডিপোজিটকে সম্ভাব্য শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং এ সম্ভাব্য শেয়ার বিবেচনায় নিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হিসাব করতে হবে। এফআরসির এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্যই শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর উদ্যোগ নিয়েছে পাওয়ার গ্রিড।
চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ১৯৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানিটি। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ৩৩১ কোটি ৯১ লাখ টাকা নিট লোকসান হয়েছিল। আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৬১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ হাজার ৭৬৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ১১ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৭৭ পয়সা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪ টাকা ৬৬ পয়সা। এ বছরের ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭৩ টাকা ৫০ পয়সায়।
সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে উদ্যোক্তা বাদে অন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে পিজিসিবি। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৬২৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির ১২১ কোটি ২৪ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছিল। ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮ টাকা ৮৯ পয়সা, যেখানে আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা।
২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে আসা পাওয়ার গ্রিডের অনুমোদিত মূলধন ১৫ হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৯১৩ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১০৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫৮ দশমিক ৫০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২২ শতাংশ সরকার, ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বাকি ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার পাওয়ার গ্রিডের শেয়ারের সর্বশেষ ও সমাপনী দর ছিল ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৩৮ টাকা ও ৫৪ টাকা ৭০ পয়সা।