বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বেড়েই চলেছে সোনার দাম। গতকাল সোমবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি আউন্স দুই হাজার ৪১৭ ডলার। ফলে আবারও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম। এ নিয়ে পাঁচ মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৩৬২ ডলার।
বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ খুব দ্রুতই সুদহার কমাতে যাচ্ছে এমন সম্ভাবনার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয়ের কারণে সোনার দাম আকাশচুম্বী হচ্ছে। এ ছাড়া যুদ্ধ ও রাজনৈতিক উত্তেজনাও এতে যোগ হচ্ছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংকট তৈরি হতে পারে, নতুন মোড় নিতে পারে যুদ্ধ পরিস্থিতি।
ট্রেডিং ইকোনমিকসের হিসাবে গতকাল সোমবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম ০.১২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স হয় ২৪১৭.৪১ ডলার। এক সপ্তাহে মূল্যবান এই ধাতুর দাম বেড়েছে ৪.৪৫ শতাংশ। সোনার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বাড়ছে রুপার দামও। গত এক সপ্তাহে রুপার দাম ১৩.২৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স হয় ৩১.৩০ ডলার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনার দামের এই উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয়। বিশেষত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ডলার ছেড়ে সোনায় ভরসা রাখতে চাইছে দেশগুলো। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা ক্রয় বাড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। টানা ১৪ বছর সোনা ক্রয় অব্যাহত রেখেছে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে ৪৫০.১ টন সোনা কিনেছিল।
২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩৫.৭ টনে এবং ২০২৩ সালে দেশগুলোর সোনা কেনার পরিমাণ ছিল ১০৩৭ টন। সব মিলিয়ে বিগত বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয়ের নজিরবিহীন আকাঙ্ক্ষা ডলারের প্রতি আস্থাহীনতাই স্পষ্ট করছে। সংস্থার তথ্য মতে, দুই কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা কিনছে। সংকট সময়ের রক্ষাকবচ এবং দীর্ঘ সময় সোনার মূল্য ধরে রাখার সক্ষমতা। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মোট সোনা কিনেছে ২৯০ টন। সোনার মজুদ সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩০.১২ টন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাড়িয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭.০৬ টন, তৃতীয় সর্বোচ্চ ভারত বাড়িয়েছে ১৮.৫১ টন, কাজাখস্তান বাড়িয়েছে ১৬.৩৯ টন, সিঙ্গাপুর বাড়িয়েছে ৬.৫৭ টন। সূত্র : ট্রেডিং ইকোনমিকস, রয়টার্স