আপাতত আর কোনো ব্যাংককে একীভূত করা হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার ফলাফল ও অভিজ্ঞতা যাচাইয়ের পর নতুন করে অন্য কোনো দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ১০টি ব্যাংককে একীভূত করার মাধ্যমে পাঁচটিতে নামানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই পাঁচ ব্যাংকের বাইরে এখন নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে স্বেচ্ছায় একীভূতকরণ করা হবে না। কারণ, এ বিষয়ে আমাদেরও কতটা সক্ষমতা আছে, এটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি ব্যাংক নিরীক্ষা করতে তিনটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান লাগবে। দেশে ভালো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব আছে। এই পাঁচ ব্যাংক থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনের দিনে আরও ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
গত ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ জন্য ভালো ও দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরুরও পরামর্শ দিয়েছিলেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয় গত ৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকেও। ওই বৈঠকে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে।
এরপর গত মার্চে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের শীর্ষ ব্যক্তিদের ডেকে সংকটে থাকা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটি পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ্রহ দেখালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রাজি হয়। ১৪ মার্চ ইসলামি ধারার এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একে অপরের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গভর্নরের উপস্থিতিতে দুই ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি হয়।
৩ এপ্রিল সরকারি খাতের দুটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। সেদিন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ৮ এপ্রিল সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সমস্যাগ্রস্ত বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ ঈদের ছুটির আগে ৯ এপ্রিল বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবির সঙ্গে সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় ও জোরপূর্বক একীভূতকরণের বিষয়ে এরই মধ্যে নীতিমালাও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।