জুয়েলারি ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বর্ণ, স্বর্ণের অলংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার দাবিসহ মোট ১৫টি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। একই সঙ্গে স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ এবং স্বর্ণের অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদানের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত বাজুস কার্যালয়ে আয়োজিত প্রাক-বাজেট (২০২৪-২৫) সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাজুসের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বর্ণ, স্বর্ণালংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের বিনিময় মূল্যের কারণে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম (১ ভরি) স্বর্ণের অলংকার কিনতে ভ্যাট ও মজুরিসহ এক লাখ ২৩ হাজার ৪৫০ টাকা লাগে। ভারতে ৩ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। বাংলাদেশের অলংকার শিল্পের অপার সম্ভাবনা আছে।
ভ্যাট আহরণে আগামী দিনে সরকারের একটি বড় খাত হতে পারে জুয়েলারি শিল্প। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের কাছে সহনীয় আকারে ভ্যাট নির্ধারণ করা জরুরি।’
বাজুস মনে করে, স্বর্ণের অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার। এতে স্বর্ণ খাত থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে পারবে।
বিভিন্ন সময়ে উচ্চবিত্তদের একটা বড় অংশই বিদেশে গিয়ে অলংকার ক্রয় করে থাকে। এতে একদিকে যেমন দেশের অর্থ বিদেশে চলে যায় অন্যদিকে সরকার প্রত্যাশিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার দেশে যারা কেনাকাটা করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ করহারের কারণে ভ্যাট প্রদানে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। এতে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন।
বাজুসের অন্য দাবিগুলো হলো—ইএফডি মেশিন যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করে সকল জুয়েলারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে।
অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিকের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্ত সাপেক্ষে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু জুয়েলারি খাতের জন্য রেয়াতি হারে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা। আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্কহার ৫ শতাংশ করা। স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে স্বর্ণের বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্কহার সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা। সেই সঙ্গে বর্তমানে বলবৎ থাকা ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ এটি এবং ৫ শতাংশ এআইটি রহিত করা।
হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের সিডি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা, এসডি ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্যে নিয়ে আসা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা, এটি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা। সেই সঙ্গে ৫ শতাংশ এআইটি এবং ৩ শতাংশ আরডি রহিত করা। ল্যাব গ্রাউন ডায়মন্ডের সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা এবং এটি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা।
বৈধ পথে মসৃণ হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা মসৃণ হীরা ৪০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে এসডি ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা।
স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদান। স্বর্ণের অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ককর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদান। আয়কর আইন, ২০২৩-এর ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’র আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি প্রদান।
‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’-এর ৮.২ উপধারা অনুসারে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক স্বর্ণের বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রি স্বর্ণের অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা।
এ ছাড়া বৈধভাবে স্বর্ণের বার, স্বর্ণের অলংকার, স্বর্ণের কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু অ্যাডিশনের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া। এইচএস কোড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্কহার হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে শুল্কহার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করা। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন, ২০১৯ (২০১৯ সালের ১০ নং আইন)-এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের উদ্ধার করা স্বর্ণের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থার সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুসের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্যসচিব ও কার্যনির্বাহী সদস্য পবন কুমার আগরওয়াল, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য সচিব তাসনিম নাজ মোনা।