পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন গল্প রটানো হচ্ছে। যা ভিত্তিহীন ও গুজব বলে জানান খোদ ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান।
সম্প্রতি দেশের শেয়ারবজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়া গুজবের কারণে। প্রায় সময়েই শেয়ারবাজার নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল করে তুলে স্বার্থান্বেষীমহল। ঠিক কয়েকদিন আগে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে গুজব ছড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছিল কারসাজি চক্র। তারপর জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল করে তুলে একটি চক্র। তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার নতুন গুজব ছড়িয়েছে নিন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসই মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান কমিশনে থাকছে না বলেও গুজব উঠেছে। এমন গুজব ছড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়টিও বরাবরের মতই গুজব বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
এবিষয়ে বুধবার (১৩ মার্চ) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান অর্থসংবাদকে বলেন, বিএসইসি ও ডিএসইর সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টায় সকল কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে৷ এসব গুজবের বিষয়গুলো হাস্যকর ও ভিত্তিহীন। এখানে দ্বন্দ্ব হওয়ার কোন অবকাশ নেই। এ ধরনের কথা তথা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে৷ যা মোটেই কাম্য নয়। গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগকারীরা ঠান্ডা মাথায় জেনে বুঝে বিনিয়োগ করার এবং যেকোনো পরিস্থিতে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এর আগে আমি বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কমিশনে কাজ করেছি। কমিশনের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং এখানে দ্বন্দ্ব হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং আমরা যৌথভাবে বাজারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
জানা গেছে, গত ০৪ মার্চ নতুন করে ৬ কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন করে গুজব উঠেছে আরোও বেশকিছু কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যাচ্ছে এবং যেসব কোম্পানির শেয়ারে এখনো ফ্লোরপ্রাইস বহাল রয়েছে সেগুলোর ফ্লোরপ্রাইস উঠে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েকটি কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব তালিকার মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি ইতিমধ্যেই জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে। তারপরেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব ভিত্তিহীন গুজব বিশ্বাস করে আতঙ্কিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে এমন গুজবে পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এর আগে, গত ১০ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেড ক্যাটাগরি ফ্লোর প্রাইস নিয়ে গুজবের বিষয়ে সতর্ক করেছে বিএসইসি। বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস ও জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কিছু ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, এরকম কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় এমুহূর্তে কমিশনের বিবেচনায় নেই। এরকম গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।
গুজবের ফলে গত কয়েকদির ধরেই বাজারে পতন অব্যহত রয়েছে। ধারাবাহিত পতনের ফলে আজ বুধবার (১৩ মার্চ) ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে। আজ ডিএসই’র প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৩২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে। যা ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরীয়াহ সূচক ‘ডিএসইএস’ ৯ দশমিক ৮ পয়েন্ট কমে এবং ডিএস-৩০ সূচক ৭ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১৩০০ ও ২০৫৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে, ৭ মার্চ এক্সচেঞ্জটির প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ৫৩ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট হারিয়েছে।এদিন সূচকটি ছিলো হাজার ১১২ পয়েন্টে। এছাড়াও বাছাই করা কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএস ৩০’ ১২ পয়েন্ট কমেছিলো। আর শরীয়াহ ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসই এস’ কমেছিলো ৭ দশমিক ১২ পয়েন্ট। এদিন থেকেই বাজারে সূচক নিম্নমুখী রয়েছে।