ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগসহ বাজার উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। আজ ১১ মার্চ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো: রুহুল আমিন আকন্দ ও সাধারণ সম্পাদক মো: আছহাব মিয়া স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত দাবিসমূহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠানো হয়।
বিনিয়োগকারীদের ০৮ (আট) দফা দাবী:
০১. পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণে তারল্য প্রবাহ দ্রুত বাড়াতে হবে। এজন্য বিএসইসিকে কমপক্ষে ৫০,০০০/= (পঞ্চাশহাজার) কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে মার্কেটের পলিসি মেকার হিসেবে আইসিবি’র সম্পৃক্ততা অতীব প্রয়োজন।
০২. স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে একটি স্থিতিশীল বাজার প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগকারীদের স্মার্ট প্রশিক্ষণ পূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এবং বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ফোর্সসেল বন্ধের দ্রুত নির্দেশ দিতে হবে।
০৩. সারা বিশ্বেই মিউচ্যুয়াল ফান্ড হলো পুঁজিবাজারের প্রাণ। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করণের লক্ষ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আরও শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত করতে হবে। সেজন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোম্পানির সমুদয় ফান্ডগুলো বিএসইসির বিধান মোতাবেক পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকালে ও উন্নয়নে সঠিকভাবে ব্যবহার হয়েছে কি-না এ বিষয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো স্বচ্ছ্ব ও কার্যকরি ভূমিকা নিতে হবে।
০৪. বিএসইসি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও বাজার স্থিতিশীলতার জন্যই তাঁর জন্ম হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছু বিষয়ে আন্তরিক হলেও ডিএসই’র ব্যাপক আন্তরিকতার অভাব ও সমন্বয়হীনতা মার্কেটে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার প্রকৃত দৃষ্টান্ত গত ফেব্রুয়ারি‘২৪ ইংমাসে ডিএসই কর্তৃক ২২টি কোম্পানিকে শাস্তিস্বরূপ ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানোর মধ্য দিয়ে। এ বিষয়ে ডিএসই’র সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অপরিপক্ক, সময়োপযোগী নয় ও অদূরদর্শিতার প্রমাণ মিলেছে। এতে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এজন্য বিনিয়োগকারী বাঁচাও, পুঁজিবাজার বাঁচাও এর লক্ষ্যে ডিএসইকে সম্পূর্ণ দায় মাথায় নিতে হবে এবং ডিএসই এমডি’র (ব্যবস্থাপনাপরিচালক) দ্রুত পদত্যাগ দাবি করছেন বিনিয়োগকারীরা।
০৫. কোম্পানির মালিকপক্ষকে শাস্তি প্রদানের নিমিত্তে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ব্যবস্থায় পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে, একটি স্বাধীন ও স্বচ্ছ্ব তদন্ত কমিটির মাধ্যমে কোম্পানির নীতি বিবর্জিত মালিকপক্ষকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
০৬. বিএসইসিকে পুঁজিবাজার বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আরো পরিপক্ক ও দূরদর্শী হতে হবে। বিশেষ করে বিএসইসি‘র ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বিনিয়োগকারীরা খুবই আতঙ্কে রয়েছেন। এর ফলে বিএসইসি’র প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গাটা দুর্বল হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লোরপ্রাইস ও জেড ক্যাটাগরি শেয়ারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে এরূপ দোদুল্যমানতা লক্ষ্য করা যায়।
০৭. গতকাল ১০ মার্চ, ২০২৪ ইংতারিখে ইনডেক্স প্রদর্শিত না হওয়ায় লেনদেনে বিনিয়োগকারীরা ভীষন আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছেন। একটি বিশেষ মহল সুপরিকল্পিতভাবে সরকারের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার সুনাম নষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্র করছে। কাজেই এই সমস্যার নিরসনকল্পে স্বচ্ছ্ব তদন্ত কমিটিরমাধ্যমে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার দ্রুত অপসারনসহ আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং, উপরোল্লিখিত প্রত্যেকটি তদন্ত কমিটিতেই বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
০৮. পুঁজিবাজারের বর্তমান ক্রান্তিকাল থেকে স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আইপিও অনুমোদন স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এবং মার্জিন ঋণধারী বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় বিএসইসিকে বিশেষ উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।