গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে শেয়ারবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ পিছিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড ( সিডিবিএল) এর তথ্য অনুযায়ি, গত তিন বছরের ব্যবধানে দেশের শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৮ বা ৩৭.১৭ শতাংশ।
সিডিবিএল’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৮ মার্চ শেয়ারবাজারে নারীদের বিও হিসাব ছিল ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯০টি। যা ৬ মার্চ বুধবার দিন শেষে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৮২টিতে। তিন বছরের ব্যবধানে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৮টি বা ৩৭.১৭ শতাংশ নারী বিও হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালের আগে শেয়ারবাজারে বিও হিসাবের বড় একটি অংশই ব্যবহার হতো শুধু আইপিও আবেদনের জন্য। আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি বাজারে ৫০ হাজার টাকার ন্যূনতম বিনিয়োগের নতুন শর্ত দেয়ার পর বিও অ্যাকাউন্ট আরও কমে। নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমে যাওয়ার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ।
আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যেত নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের একটি বড় অংশ পুরুষ বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে ব্যবহার করতেন। সেই সুবিধা এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিও হিসাবের সংখ্যাও কমে গেছে।
এছাড়া শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যতই বলুক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে, বাস্তবে ওই কথার কোনো প্রতিফলন না দেখে নারী বিনিয়োগকারীরা ক্রমাগত শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া এফডিআর এবং সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ অধিক নিরাপদ হওয়ায় নারীরা ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদ বিনিয়োগে চলে যাচ্ছেন।
সিডিবিএলের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ৮ মার্চ আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৭৯টি। একইভাবে ২০২৩ সালে কমেছে ৫৭ হাজার ৯৬৫টি এবং ২০২৪ সালে কমেছে ২৪ হাজার ৭৬৪টি নারীদের হিসাব। এই বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাজারে নারীদের বিও অ্যাকাউন্ট কমলেও প্রকৃত অর্থে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। আইপিওতে বিনিয়োগ সুবিধার জন্য পরিবারের নারী সদস্যের নামে বিও হিসাব খোলার প্রবণতা ছিল। কিন্তিু আইপিওতে নতুন বিধিমালার কারণে ২০২০ সালের পর এসব হিসাবগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে নারী বিও হিসাব কমেছে।
তিনি বলেন, তবে প্রকৃত অর্থে নারীর অ্যাকাউন্ট বেড়েছে এবং আগামীতে তা আরও বাড়বে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং শেয়ারবাজার মধ্যস্থতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় নারী কর্মীর বৃদ্ধিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা উৎসাহ দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় নারী কর্মী বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব বিনিয়োগকারীদের ওপর পড়বে, যা নারী বিনিয়োগকারী বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, একজন বিনিয়োগকারী একটি ব্রোকারেজ হাউসে একক ও যৌথ নামে সর্বোচ্চ দুটি বিও হিসাব খুলতে পারবেন। এভাবে কোনো বিনিয়োগকারী চাইলে ১০টি ব্রোকারেজ হাউসে একক ও যৌথ নামে দুটি করে মোট ২০টি বিও হিসাব খুলতে পারেন।
তবে কোনো কোম্পানির শেয়ারের আইপিওতে একক ও যৌথ মিলিয়ে কেবল দুটি বিও হিসাব থেকে আবেদনের সুযোগ পান একজন বিনিয়োগকারী। সে ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি বাজারে প্রতিটি বিও হিসাবের বিপরীতে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।