শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি গ্রামীণফোনের ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর উঠে গেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, গতকাল রোববার কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস উঠে যায়। এর ফলে এদিন গ্রামীণফোনের শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন হয়।
এদিকে গ্রামীণফোনের শেয়ারের বড় দরপতনে গতকাল মূল্যসূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৯ পয়েন্ট কমেছে। বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সূচকের এ পতনের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল গ্রামীণফোনের। গ্রামীণফোন ছাড়া গতকাল সূচক পতনে আরও ভূমিকা ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের।
শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপ করা হয়। সর্বনিম্ন মূল্যস্তর হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে শেয়ারের দাম বেঁধে দেওয়া সীমার নিচে নামতে পারে না। এ ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে শেয়ারবাজারের পতন ঠেকানো হলেও এতে বাজারে লেনদেন স্থবির হয়ে পড়ে।
ভালো ভালো অনেক কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে দেড় বছরেরও বেশি সময়। এমন পরিস্থিতিতে বাজার-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার শুরু করে। তবে ভালো মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস লভ্যাংশ ঘোষণা-পরবর্তী রেকর্ড তারিখের পর প্রত্যাহার হবে বলে জানিয়েছিল বিএসইসি।
ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ায় গতকাল ডিএসইতে গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ২৫ টাকা বা প্রায় ৯ শতাংশ কমে ২৬১ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে আসে। গত প্রায় দুই বছরের মধ্যে এটিই কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন বাজারমূল্য। সর্বোচ্চ দরপতন হলেও এদিন কোম্পানিটির প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের শেয়ারের দরপতনে গতকাল ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ১৭ পয়েন্ট। আর স্কয়ার ফার্মার
শেয়ারের প্রায় ১ শতাংশ দরপতনে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৫ পয়েন্টের বেশি। গতকাল ডিএসইএক্সের ৩৯ পয়েন্টের পতনের মধ্যে এ দুটি কোম্পানির কারণেই কমেছে ২২ পয়েন্ট।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণফোনের পর আজ সোমবার থেকে তালিকাভুক্ত আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটিবিসি) ফ্লোর প্রাইস উঠে যাবে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইস তথা ৫১৯ টাকায় আটকে আছে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির শেয়ারেরও তেমন কোনো লেনদেন হচ্ছে না ফ্লোর প্রাইসের কারণে।
তবে শেয়ারবাজারে গতকাল সূচকের পতন হলেও লেনদেন বেড়েছে। বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত গ্রামীণফোন স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরে আসায় লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮২ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৬ কোটি টাকা বেশি।
ডিএসইতে এদিন ৩৯২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়। এর মধ্যে আগের চেয়ে দাম কমেছে ২৪২টির, বেড়েছে ১১০টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৪০টির।
বেশির ভাগ কোম্পানির দরপতনের কারণে গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন ৩ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা কমে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪০ কোটি টাকায় নেমে আসে।