দুধ ক্যালসিয়াম, খনিজ, ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, উপকারী ফ্যাট, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসের সমৃদ্ধ উৎস। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো উপায়ে দুধ পান করা উচিত। বেশ কয়েকটি গবেষণা এ বিষয়ে সমর্থন করে যে, দুধ ওজন হ্রাসকে ত্বরান্বিত করতে পারে, শক্তিশালী হাড় গঠনে সহায়তা করতে পারে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করতে পারে। আপনি কি জানেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও খুব বেশি দুধ পান করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কিছু সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
শৈশবকাল থেকেই বিশ্বাস করে এসেছি যে, দুধ আমাদের জন্য সবচেয়ে উপকারী পানীয়। তবে খুব বেশি দুধ পান করলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, খুব বেশি দুধ পান করলে স্বাস্থ্যের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী বড় ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সহ আরও বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতএব, সতর্ক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশ করেছে এমন পাঁচটি সমস্যার কথা, যা অতিরিক্ত দুধ পানের কারণে ঘটতে পারে:
মাঝেমাঝেই হজম সংক্রান্ত সমস্যা
দুধ পান করলে তা আপনাকে দীর্ঘ সময় পেট ভরে থাকার অনুভূতি দেয়। তবে, অনেক সময় অতিরিক্ত দুধ পানের ফলে পেট ফুলে যাওয়া, বমি বমি ভাব বা অস্বস্তি বোধ হতে পারে। যদি এটি মাঝেমাঝেই ঘটে থাকে তবে এটি অন্ত্রের এক ধরনের সমস্যা বা খাবারটির প্রতি অসহিষ্ণুতা হতে পারে। যখন আপনার শরীরে দুধ সহ্য করতে অসুবিধা হয় বা অতিরিক্ত পান করে থাকেন, তখন এটি হজমকে ব্যাহত করতে পারে। এমনকী রক্তের প্রবাহে কিছু এনজাইম ছেড়ে দেয় যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার কারণ হতে পারে।
ক্লান্তি এবং অলসতা ভর করেছে?
বিশ্বাস করুন বা না করুন, যদি আপনার শরীর দুধের জন্য উপযুক্ত না হয় তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি এবং অলসতার কারণ হতে পারে। দুধে পাওয়া এ ১ কেসিন কখনো কখনো অন্ত্রের আবরণের পাশাপাশি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং জীবাণু ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে। এজন্য দুধের অ্যালার্জিতে ভোগা প্রচুর মানুষকে দুধের বিকল্প বেছে নিতে বলা হয়।
ত্বকে সমস্যা
অতিরিক্ত দুধ পানের কারণে আপনার মুখে বা ত্বকের অন্যান্য অংশে অ্যালার্জি হতে পারে। আপনার ত্বকে যদি খুব ঘন ঘন লাল ব্রণ, দাগ বা র্যাশ দেখা যায় তবে আপনার খাবারের তালিকার দিকে নজর দিন। দুধে উপস্থিত কিছু রাসায়নিক প্রদাহ সৃষ্টির পাশাপাশি ত্বকের সমস্যাও ডেকে আনতে পারে। এটি পুরুষের তুলনায় নারীর ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে।
হাড়ের ভঙ্গুরতা
শক্তিশালী হাড় গঠনের জন্য দুধ উপকারী- এমনটাই আমরা জানি। তবে প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে বেশি দুধ পান করা হাড়ের পক্ষে ভালো না-ও হতে পারে। খুব বেশি দুধ আসলে হাড়কে ভঙ্গুর এবং ঘনত্ব হ্রাস করতে পারে। ২০১৪ সালের একটি বিএমজে সমীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, বয়স্ক পুরুষরা খুব কম দুধ পান করেন। এদিকে পর্যাপ্ত দুধ পান করা নারীদের তুলনায় তাদের হাড়ের ভঙ্গুরতা বা প্রদাহে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
মস্তিষ্কে সমস্যা
অতিরিক্ত দুধ পান করলে মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভুলে যাওয়ার সমস্যা, সাময়িক স্মৃতি হারানো এসব লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হোন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধজাত পণ্যগুলোতে উপস্থিত উচ্চ পরিমাণ কেসিন সামগ্রী নির্দিষ্ট মস্তিষ্কের রিসেপ্টরগুলোকে ধোকা দিয়ে ভুয়া সংকেত দিতে পারে। কেউ কেউ আরও বলেন যে, অতিরিক্ত দুধ পান করলে তা বয়সের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
দিনে কতটুকু দুধ পান করা উচিত?
অতিরিক্ত দুধ পান করলে যেসব প্রতিকূলতা দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে গেছেন। তবে আপনার খাবার তালিকা থেকে দুধ পুরোপুরি বাদ দেবেন না। প্রতিদিন ১-২ গ্লাস দুধ পান করলে তা আপনার পুষ্টি সরবরাহের জন্য যথেষ্ট। পনির, দই বা ল্যাকটোজ মুক্ত দুধকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন।