রাজধানীর বনানী, মহাখালী, উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিরোজিরো গ্রুপ, বাবা গ্রুপ, জাউরা গ্রুপ, ডি কোম্পানি ও জাহাঙ্গীর গ্রুপসহ বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের ৩৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। টাকার বিনিময়ে মারামারি, দখলবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে তারা।
র্যাব বলছে, স্থানীয় বিভিন্ন বড় ভাইদের হয়ে কাজ করে এসব গ্যাং সদস্যরা। অনেকেই এসব গ্রুপের সদস্যদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যারা এসব গ্যাং গ্রুপের মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে কাজ চলমান।
শুকবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সী ছেলেদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনা। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেধে ঘুরে, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মারামারি করে।
এছাড়া তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে বিশৃঙ্খলায় কেউ প্রতিবাদ করলে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর, টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক অভিযানে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘০০৭ গ্রুপের দলনেতা আল-আমিন, জাউরা গ্রুপের দলনেতা মাহাবুব, বাবা গ্রুপের দলনেতা সাদ, হাই ভোল্টেজ গ্রুপের মনা, ডি কোম্পানির দলনেতা পাপ্পু ওরফে লন্ডন পাপ্পু ও তার অন্যতম দুই সহযোগী আকাশ ও আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর গ্রুপের দলনেতা বয়রা জাহাঙ্গীরসহ ৩৭ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ২৪টি মোবাইল, একটি কুড়াল, একটি পাওয়ার ব্যাংক, পাঁচটি রড, ১৬টি চাকু, তিনটি লোহার চেইন, একটি হাতুড়ি, একটি উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করা মোটরসাইকেল, একটি ব্লেড এবং নগদ ২৪ হাজার ২৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১ অধিনায়ক মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রতিটি গ্রুপের আনুমানিক সদস্য ১০ থেকে ১৫ জন। তারা টাকার বিনিময়ে মারামারি, দখলবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা কারা, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা জানেন কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকটি গ্রুপের দলনেতা গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কিছু ব্যক্তি এসব গ্রুপের সদস্যদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
তিনি আরও বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা মদদদাতাদের হয়ে মারামারি করে। অনেকেই এ গ্রুপের সদস্যদের মূলত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের হয়ে কাজ করার কারণে অপরাধ করে শেল্টার পায়। যারা তাদের নানাভাবে মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১ এর সিও বলেন, গণমাধ্যম ও র্যাব সদরদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কিশোর গ্যাং সম্পর্কে আমরা অনুসন্ধান করছি। আগেও এভাবে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব-১ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আগে অনেকের নাম পেয়েছি। তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এখন কিশোর গ্যাং নিয়ে নির্দেশনা পাওয়ার পরে গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে কাজ করেছি। এসময়ে নতুন গ্রুপগুলোকে দলনেতাসহ সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রম, মামলাসহ তাদের বিষয় অনুসন্ধান চলছে। আমাদের অভিযান থেমে নেই। নতুন করে কোনো গ্রুপের তথ্য পেলে গ্রেফতার করা হবে।
কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে দেখা যায়। এসব মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে লে. কর্নেল মোস্তাক বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই অপরাধীদের কোনো দল বা ঠিকানা থাকতে পারে না। তাদের কোনো পরিচয় বিষয় না। তারা কার হয়ে কাজ করে সেটিও বিবেচ্য বিষয় নয়। অপরাধ করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।