একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় ১০ জনের ফাঁসি ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে ২ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌসের এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮) ছাড়া ১৫ জন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে আদালত এলাকায়।
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন বিচারক। তবে রায় লেখা শেষ না হওয়ায় রায় ঘোষণার জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ পুনর্নির্ধারণ করেন আদালত।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। মামলায় রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তারা নোয়াখালী জেলা কারাগারে আছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্থানীয় রুহুল আমিনের নেতৃত্বে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সুবর্ণচর উপজেলায় নিজের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে ১০-১৫ জন লোক তাকে ঘিরে ধরে তাদের পছন্দের প্রতীকে সিল মারতে বলেছিল। এ নিয়ে ওই লোকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় তারা। ওই দিন রাত ১২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে, তার স্বামী ও চার সন্তানকে বেঁধে ফেলে। এরপর দুর্বৃত্তরা বেধড়ক পেটায় এবং টেনেহিঁচড়ে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তারা গলা কেটে হত্যা করতে চেয়েছিল। তিনি হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে জীবন ভিক্ষা চাইলে দুর্বৃত্তরা হত্যা না করে ভোর ৫টার দিকে ফেলে রেখে চলে যায়। সকালে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক জাকির হোসেন।