দেশের পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের(ডিএসই) ট্রেডিং প্লাটফর্ম লেনদেনের গতির সাথে তাল মিলাতে পারছে না। সামলাতে পরছে না লেনদেনের চাপ। সমস্যা হচ্ছে ট্রেডিং এক্সিকিউট করতে। বিপাকে আছেন ট্রেডাররা। লেনদেন বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা অনুভব করছেন তারা।
সোমবার ডিএসইর টপ ব্রোকারদের প্রায় সবাইকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শীর্ষ প্রায় দশটি ব্রোকারের সাথে এই বিষয়ে আলাপ করেছে। তাদের অভিযোগ বাই-সেলের আর্ডার এক্সিকিউট করতে কোনো কোনো সময় ৫ থেকে ৬ মিনিট সময় নেয়। বাই বা সেল অর্ডার বসালে এটি ওয়ার্কিং দেখায়। ফলে তারা দ্বিতীয়বার অর্ডার দেয়। অনেক সময় এটি এক্সিকিউট হয়ে যায়। অন্যদিকে সময় নেওয়ার কারণে অনেক সময় সঠিক দামে শেয়ার বিক্রি বা কিনতে পারে না গ্রাহকরা। যার নেতিবাঁচক প্রভাব পরে ট্রেডারদের উপর।
তবে বিষয়টি নিয়ে ডিএসই দায় চাপাচ্ছে অন্যভাবে। তাদের বক্তব্য হলো ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোর কম্পিউটারের ডাটা আপডেট না। ফলে তাদের এই সমস্যা হচ্ছে। এই কথা মানতে নারাজ ডিএসইর শীর্ষ ব্রোকাররা। তাদের কথা হলো ট্রেডিংয়ের জন্য তারা সবচেয়ে লেটেস্ট ভার্সনের কম্পিউটার ব্যবহার করেন। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রোকারদের সহযোগিতা চায় ডিএসই।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা বলেন, ডিএসইর ট্রেডিং প্লাটফর্মে তারা তেমন সমস্যা দেখছেন না। তবে সমস্যা থাকলে বিষয়টি ডিএসইর নজরে আনার অনুরোধ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন করতে কী ধরণের সমস্যা হচ্ছে তা সঠিকভাবে ডিএসইকে জানানো হলে তার সমাধান করা হবে। প্রয়োজনে সমস্যাগুলো ভিডিও করে ডিএসইকে পাঠানোর অনুরোধ করেন তিনি।
পুঁজিবাজারের লেনদেন সঠিকভাবে করার জন্য ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বিশ্বের সর্বাধুনিক ট্রেডিং প্লাটফর্ম স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক ওএমএক্স এবং ফ্লেক্স ট্রেড সিস্টেমসের সঙ্গে চুক্তি করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তৎকালীন এমডি স্বপন কুমার বালা। আর নাসডাক ওএমএক্সের পক্ষে এমডি রবার্ট ফ্রটজ এবং ফ্লেক্স ট্রেড সিস্টেমসের পক্ষে প্রেসিডেন্ট এবং নির্বাহী পরিচালক বার্ট্রান্ড রাসাত। চুক্তির ৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রযুক্তি হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে একই বছরের ১১ ডিসেম্বর ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেমস নামে নতুন সফটওয়্যার চালু করে ডিএসই।
নাসডাক ওএমএক্স হলো যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক একটি অর্থনৈতিক সেবা প্রদানকারী কোম্পানি। বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত স্টক এক্সচেঞ্জ নাসডাকসহ ইউরোপে ৮টি স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনা করছে। স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনার পাশাপাশি কোম্পানিটি স্টক এক্সচেঞ্জসহ অর্থনৈতিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রযুক্তিগত সেবা প্রদান করছে। নাসডাক ওএমএক্সের ট্রেড প্লাটফর্মকে সর্বাধুনিক বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে ফ্লেক্স ট্রেড সিস্টেমসও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি। শেয়ার এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক পণ্য কেনাবেচার অনলাইন বাজার পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার অর্ডার সমন্বয় সংক্রান্ত সফটওয়্যার প্রস্তুত করে থাকে।
ওই সময়ে ডিএসইর এমডি স্বপন কুমার বালা বলেছিলেন, নতুন নাসডাক ওএমএক্স এবং ফ্লেক্স ট্রেড সিস্টেমসের ট্রেড প্লাটফর্ম ক্রয়ের মধ্য দিয়ে ডিএসইর সক্ষমতা বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। এতে অনেক বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট হবে।
উল্লেখ,অটোমটেডে ট্রেডিং সিস্টেমে রিনিউয়াল প্রজেক্টে নামে ডিএসইর প্রকল্পে ব্যয় হয় ১০০ কোটি টাকার উপরে। আর্ন্তজাতিকভাবে পরিচিত প্রতিষ্ঠান নাসডাক এবং ফ্লাক্স ট্রেডের মাধ্যমে এ সফটওয়্যার আনা হয়। ডিএসইর ফ্লেক্সটিপি সফটওয়্যারের ৫টি বিভাগ ভাগ করা। এগুলো হলো : নেটওয়ার্ক কনফিগার,টার্মিনাল কনফিগার,ব্রোকার কনফিগার,ব্রোকার এডমিন অপারেশন,ক্রেডিট কন্ট্রোল অপারেশন এবং ডিএসই-ফ্লেক্সপিটি ডিলার অপারেশন (ভিউ অনলি)।