1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন

হিরোর ফাঁদে পথে বসেছে লাখো বিনিয়োগকারী

  • আপডেট সময় : বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২

দেশের পুঁজিবাজারে সিরিজ ট্রেডিং, ইনসাইড ট্রেডিং বা কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারদর বাড়ানোর বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত পরিচিত নাম বিনিয়োগকারী মো. আবুল খায়ের হিরো। গত দুই বছর ধরে কারসাজির মাধ্যমে এক ডজনেরও বেশি শেয়ারের দর বাড়িয়ে তুলে নিয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কারসাজির কারণে হিরোকে দায়সারা জরিমানা করেছে বলে বাজারে সমালোচনাও রয়েছে।

এদিকে হিরোর কারসাজির ফাঁদে পা দিয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পথে বসছেন লাখো বিনিয়োগকারী। ফাঁদে পড়ে ‘কেঁদেও কুল না পাওয়ার’ মতো অবস্থা হয়েছে তাদের। এনআরবিসি ব্যাংক, জেনেক্স ইসফোসিস, ওয়ান ব্যাংক, ই-জেনারেশন, ফরচুন শুজ এবং ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মতো কয়েক হালি শেয়ারে হিরোর কারসাজির ফাঁদে পা দিয়ে স্বাভাবিক মূল্যের থেকে কয়েকগুণ বেশি দামে কিনে এখন পথে বসেছেন। বাজারে এমন কারসাজি বিদ্যমান এবং বিএসইসির নিরপেক্ষ ও সঠিক আচরণ না করাকে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এতে বাজার দীর্ঘ সময়ের জন্য আস্থা সংকটে পড়বে এবং ভবিষ্যতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে যাওয়া ছাড়াও বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

কারসাজি করা কিছু শেয়ারের দর ও লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত দুই বছরের মধ্যে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায়। সে সময় শেয়ারটির দর ছিল ২৩২ টাকা ৯০ পয়সা। এর আগে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল শেয়ারটির দর দুই বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ দাম অবস্থানে ছিল। সে সময় দর ছিল ৬৪ টাকা। এরপর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে থাকে হিরো ও তার সহযোগীরা। এতে শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে লেনদেনও বেড়ে যায়। সে সময় শেয়ারটি ১ কোটির বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে। তারপরই শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে হিরো ও তার সহযোগীরা বের হতে থাকে আর শেয়ারদরও কমতে থাকে। এতে দেখা যায়, কোম্পানিটির শেয়ারদর কমে দাঁড়ায় ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর আবার কিছুটা বৃদ্ধি পায় শেয়ারটির দর। গত সোমবার লেনদেন শেষে শেয়ারটির দর ছিল ১৪৭ টাকা ৪০ পয়সা; যা সর্বোচ্চ দাম থেকে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা কম। সে হিসাবে সেই সময় কেনা শেয়ার কারও কাছে এখনও থাকলে শেয়ারপ্রতি ৩৬ দশমিক ৭১ শতাংশ লোকসানে রয়েছে।

একইভাবে ফরচুন শুজের শেয়ারে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল শেয়ারটির দর ছিল ১৬ টাকা। এরপর থেকে শেয়ারটির দর বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ হয়ে দাঁড়ায় ১৪২ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর থেকে আবার শেয়ারটির দর কমতে শুরু করে। কারণ তখন হিরো ও তার সহযোগীরা শেয়ারটি বিক্রি করে বের হয়ে যায়। বর্তমানে শেয়ারটির দর কমে সোমবার ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে। সোমবার শেয়ারটির দর ছিল ৭৯ টাকা ৫০ পয়সা। সে হিসাবে সর্বোচ্চ দরে কেনা শেয়ারটির দর কমেছে ৬৩ টাকা ৩০ পয়সা। এতে সে সময়ে কেনা শেয়ারপ্রতি বর্তমানে বিনিয়োগকারী লোকসানে রয়েছে ৪৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।

এছাড়া ই-জেনারেশনের শেয়ারদর বাড়িয়ে ৬৮ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। সোমবার লেনদেন শেষে শেয়ারটির দর ছিল ৫৫ টাকা ৯০ পয়সা। সে হিসাবে শেয়ারটির দর কমেছে ১২ টাকা ১০ পয়সা। এতে সে সময়ে কেনা শেয়ারপ্রতি বর্তমানে বিনিয়োগকারী লোকসানে রয়েছে ১৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে এখনও হিরো ও তার সহযোগীদের শেয়ারটি থেকে বের হওয়া শেষ হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাই শেয়ারটির দর কমে আবার কিছুটা বেড়েছে। এতে শেয়ারটির দর আরও বাড়িয়ে বা একটি ভালো মুনাফায় পৌঁছে তারা বের হবে বলে জানান তারা।

এদিকে এনআরবিসি ব্যাংক শেয়ার সর্বোচ্চ দামে কিনে এখন একজন বিনিয়োগকারী শেয়ারপ্রতি ২২ টাকা ৩০ পয়সা বা ৫৬ শতাংশ লোকসানে রয়েছে। ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর শেয়ারটির দর ছিল ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা। আর সোমবার লেনদেন শেষে শেয়ারটির দর ছিল ১৭ টাকা ৬০ পয়সা। শেয়ারটি নিয়ে দু’দফায় কারসাজি হয়। প্রথম দফায় শেয়ারটি ২০২১ সালের ১ জুন ৩৮ টাকা ৯০ পয়সায় ছিল।

এছাড়া ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়িয়ে হিরো ও তার সহযোগীরা কারসাজি করে বাড়িয়ে ২০ টাকা ১০ পয়সা করে। পরে কারসাজিকারীরা বের হয়ে গেলে শেয়ারটির দর কমে সোমবার লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ১০ টাকা ৬০ পয়সায়। এতে সে সময় কিনা শেয়ারপ্রতি একজন বিনিয়োগকারী ৯ টাকা ৫০ পয়সা বা ৪৭ দশমিক ২৬ শতাংশ লোকসানে রয়েছে।

এদিকে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারেও একই কারসাজি হয়েছে। শেয়ারটির ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম হয়। সে সময় শেয়ারদর দাঁড়ায় ১৭৭ টাকা ৩০ পয়সা। এরপর হিরো ও তার সহযোগীরা বের হতে শুরু করে এবং কারসাজিকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেলে শেয়ারদর কমতে শুরু করে। শেয়ারটির দর কমে সোমবার লেনদেন শেষ হয় ৭১ টাকা ৩০ পয়সা। সে হিসাবে কারসাজির সময় কিনা শেয়ারপ্রতি একজন বিনিয়োগকারী ১০৬ টাকা বা ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ লোকসানে রয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, হিরো ও তার সহযোগীদের যখন কারসাজি চলছে, তখন জেনে-শুনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রতিবেদনে কারসাজির বিষয়ে বলা হলে মুনাফার বিপরীতে নামমাত্র জরিমানা করা হয়। এতে জরিমানার পরও থেমে থাকে না হিরোর কারসাজি। সেই সঙ্গে বিএসইসির এমন বিমাতাসুলভ আচরণে অনেকেই হিরোর সঙ্গে কমিশনেরও কোনো যোগসাজশ রয়েছে কি না? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেও সন্দেহ করছে।

তারা বলছেন, হিরোকে দু’বার জরিমানা করা হলেও তা কারসাজি করে মুনাফার তুলনায় অনেক কম ছিল। এমনটি দেখেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হিরোর ফাঁদে পা দেয়। তারা মনে করেন, হিরোকে যতই জরিমানা করা হোক না কেন তা লোক দেখানো ‘আইওয়াশ’, আর এতে হিরোর কারসাজি থামবে না বরং এ সুযোগে হিরোর শেয়ারে বা ‘আইটেমে’ বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা করা সম্ভব হবে। এদিকে সেই সুযোগ নেয় হিরো। বিনিয়োকারীরা যখন হিরোর শেয়ারে প্রবেশ করে, তখন মুনাফা নিয়ে শেয়ার থেকে বের হয় হিরো ও তার সঙ্গীরা। ফলে কারসাজিকারীরা বের হয়ে যাওয়ার পর অতিমূল্যায়িত শেয়ারের দরে বড় পতন হয়। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারী, হারায় তাদের কষ্টার্জিত পুঁজি।

বাজারে হিরো ও তার মতো কারসাজিকারীদের এমন কারসাজিতেও বিএসইসির বিমাতাসুলভ আচরণকে সন্দেহ ও প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা বলেন, বিএসইসির কমিশনাররা সবকিছু দেখে-শুনেও চুপ করে থাকে। আর তারা আইনের বা নিয়মের অজুহাত দিয়ে বলে কিছুই করার নেই। কিন্তু বিএসইসিকে পুঁজিবাজারের ভালোর জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেয়া আছে; যা তারা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করছে না। এতে বাজার দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বাজারকে ভালো রাখতে বিএসইসির সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, শেয়ার নিয়ে যখন কারসাজি চলে তখন শেয়ারগুলোর লেনদেন বিএসইসি স্থগিত করে দিতে পারে। তাহলে আর বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু বর্তমান কমিশনের সেটা ধরতে ছয় মাস সময় লাগে। সেই সুযোগে শেয়ারের কয়েকগুণ দাম বাড়ায় কারসাজি চক্র। কিন্তু এর আগের কমিশনকে শেয়ারের দর সন্দেহজনকভাবে বাড়লেই সেটার লেনদেন স্থগিত করতে দেখা গেছে। যেহেতু বিএসইসির কারসাজি ধরতে সময় লাগে আর কারসাজি চক্র সেই সুযোগ নেয়, তাই বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক শেয়ার বিজকে বলেন, যখন কারসাজি চলে তখন শেয়ারের দর এক থেকে দিগুণ বাড়লেই বিএসইসির সেটার প্রতি নজর দেয়া দরকার। সেই সঙ্গে সিরিজ ট্রেডিং ও ইনসাইড ট্রেডিংয়ের সন্দেহ হয় এমন বিও হিসাব ফ্রিজ করে দেয়া এবং শেয়ারটির লেনদেন স্পট লেনদেনে দেয়া। যাতে নগদ টাকায় লেনদেন করতে হয় এবং এতে বিনিয়োগকারী বুঝতে পারে শেয়ারটিতে তাদের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু সবকিছু দেখেশুনে কিছু না বলা এবং পরবর্তী সময়ে সামান্য জরিমানা করা হচ্ছে তাদেও সুযোগ দেয়া। এতে বিনিয়োগকারীরা মনে করে, এ সুযোগে শেয়ারের দর অনেক বাড়বে আর তারাও কারসাজিকারীদের সঙ্গে মুনাফা করতে পারবে। কিন্তু সেটা আর হয় না, কারসাজি চক্র মুনাফা করে আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারী। আর যারা কারসাজি করে তাদের শুধু নগদ অর্থ জরিমানা নয়। বড় কোনো শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যাতে করে তারা আর কারসাজি করার সাহস না পায়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ