পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের জমি ও কারখানা নিলামে উঠছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া ঋণের অর্থ আদায় করতে এই নিলাম ডেকেছে।
২৭ অক্টোবরের মধ্যে ফেনীভিত্তিক কোম্পানিটির জমি ও কারখানা কিনতে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে থেকে দরপত্র আহ্বান করে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিলে আমিন কোর্ট করপোরেট শাখা।
এদিকে নূরানী ডাইংয়ের উদ্যোক্তারা প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ ও ব্যাংকের তহবিল আত্মসাৎ করে দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছেন।
অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটির আমিন কোর্ট করপোরেট শাখায় নূরানী ডাইংয়ের ঋণ ও সুদসহ ৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।
ব্যাংকের ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য কোম্পানিটিকে বারবার নোটিশ দেওয়া হয় এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমেও জানানো হয়। কিন্তু কোম্পানিটি কোনো রকম সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের আমিন কোর্ট করপোরেট শাখার মহাব্যবস্থাপক এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা নূরানী ডাইংয়ের সম্পদ বিক্রির জন্য নিলামের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ২২৬ কোটি টাকার আরেকটি ঋণখেলাপির অভিযোগে এবি ব্যাংকও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
এবি ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ২৮ সেপ্টেম্বর নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটারের উদ্যোক্তা পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) সঙ্গে জালিয়াতির কারণে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১৬ ও ২০১৭ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও প্রকাশিত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী এবি ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির ব্যাংক দায় (দীর্ঘমেয়াদি ঋণ) যথাক্রমে ৫৭ কোটি ২০ লাখ এবং ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উল্লেখ ছিল। কিন্তু পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক সংগৃহীত ব্যাংক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী প্রকৃত ব্যাংক দায়ের পরিমাণ ১৬৮ কোটি ৯৬ লাখ (২০১৮), ১৯২ কোটি ৬৮ লাখ (২০১৯) এবং ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা (২০২০) দায় রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। এতে কোম্পানির ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করা হয়, যার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদা অংশগ্রহণকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।
কোম্পানিটি ২০১৭ সালে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ৪৩ কোটি টাকা বিভিন্ন কারসাজি স্কিম/ডিভাইসের মাধ্যমে, যেমন ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতি, এমটিডিআরের নগদায়ন এবং কোনো প্রকার কাজ/পরিষেবা ছাড়াই স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে (সহযোগী প্রতিষ্ঠান) অর্থ প্রদান করে ৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে, যার মাধ্যমে কমিশনের আইপিও অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে।
পরে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিও হিসাবে ধারণকৃত ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের কাছে জামানত হিসেবে জমা প্রদান করে মার্জিন ঋণ গ্রহণ করে তছরুপ করে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের জামানতকৃত শেয়ারের (৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ) বিপরীতে প্রাপ্ত মার্জিন ঋণও খেলাপিতে পরিণত হয়।
কোম্পানির উদ্যোক্তারা কেবল আইপিও তহবিলই আত্মসাৎ করেনি এবং তার ব্যবসার পরিচালন অবস্থা জাল করেনি, কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তহবিলের মিথ্যা ব্যবহারের প্রতিবেদন দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
প্রসপেক্টাস অনুযায়ী কোম্পানিটির আইপিও নিরীক্ষক ছিল আহমেদ জাকের অ্যান্ড কো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
আইপিও প্রসপেক্টাস অনুসারে, রেহানা আলম চেয়ারম্যান এবং এস কে নুরুল আলম কোম্পানির উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এস কে নুরুল আলম ১৬ এপ্রিল ২০১৯ সালে মারা যান। তার ছেলে এস কে নূর মোহাম্মদ আজগার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন।