ধারাবাহিকভাবে দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস লিমিটেডের। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ১ হাজার ১২ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় মুনাফার আশায় চড়া দামে কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির হিসাব না মেলায় হতাশ হয়েছেন। ফলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির প্রবণতা ডেকে এনেছে এমন দরপতন।
পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোকে আগামী এক বছরের মধ্যে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন করতে হবেÑএ নির্দেশনা দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ৯ ডিসেম্বর ইস্যু করা এ-সংক্রান্ত চিঠি ১২ ডিসেম্বর বিএসইসি থেকে ওইসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়।
ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের পরিশোধিত মূলধন এক কোটি টাকারও কম। তাই কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হলে বড় আকারে বোনাস দিতে হবে অথবা বড় আকারে রাইট শেয়ার ইস্যু করতে হবে অথবা বোনাস ও রাইট মিলিয়ে বড় আকারে ইস্যু করতে হবে।
বিএসইসির আলটিমেটামের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে কোম্পানিটিকে নিয়ে এমনই উচ্চাশা প্রচার হতে থাকে যে, কোম্পানিটির ভালো রিজার্ভ রয়েছে। ভালো মুনাফাও করেছে। সুতরাং কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা এবার বড় চমক দেখবেন। এমন আশায় বিনিয়োগকারীরা উচ্চদরে কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে শুরু করেন। যে কারণে বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের চাহিদা বেড়ে যায় এবং এর শেয়ারদরও হু হু করে বেড়ে যায়।
বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন, এ বছর ভালো পরিমাণ বোনাস শেয়ার পাওয়া যাবে। তাই ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারটির দর ক্রমাগত বাড়তে থাকে। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর এর শেয়ারদর ছিল এক হাজার ৬৪৮ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে গত ২১ ডিসেম্বর ৩ হাজার ৬৮০ টাকায় পৌঁছে যায়। যদিও ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগে টানা দুদিন দাম কমে ২৩ ডিসেম্বর দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩২২ টাকা ১০ পয়সায়।
সেখানেই থেমে থাকেনি দরপতন। লভ্যাংশ ঘোষণার কয়েকদিন আগে থেকেই চাউর হয়, প্রত্যাশিত লভ্যাংশ আসবে না। ২৩ ডিসেম্বরের পর দুই দিনে শেয়ারটির বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। ওই দুদিন কোম্পানিটির শেয়ারের জন্য ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এরপর ২৬ ডিসেম্বর কোম্পানিটি গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৬০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৪০ শতাংশ ক্যাশ ও বাকি ২০ শতাংশ বোনাস।
আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৫২ টাকা ১৮ পয়সা। আগের বছরের শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৫ টাকা ৪৩ পয়সা। সেই তুলনায় লভ্যাংশ দিয়েছে অনেক কম। যদিও এই লভ্যাংশ কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। কোম্পানিটির আয়ও স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু আয়ের সঙ্গে লভ্যাংশের কোনো সামঞ্জস্যতা নেই।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তামাশা করেছে। কারণ কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে, তা আয়ের সাড়ে ৩ ভাগের এক ভাগ। তারপরও যদি ঘোষিত লভ্যাংশ সবটাই বোনাস হতো, তাহলেও বিনিয়োগকারীরা হয়তো কিছুটা খুশি হতে পারতেন।
কোম্পানিটিতে বিনিয়োগকারীরা যে আশা নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন এমনটা আশঙ্কা তৈরি হয়। এরপর ধারাবাহিক পতনের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ২০ জানুয়ারি ২ হাজার ৬৮০ টাকা ৪০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়। ফলে ২১ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী এক মাসে কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে এক হাজার ১২ টাকা।
একটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা মো. মাসুম বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ারের সংখ্যা সবচেয়ে কম। যে কারণে লভ্যাংশের পরিমাণ খুব আকর্ষণীয় না হলেও শেয়ারদর সব সময় আকাশছোঁয়া হয়। তবে এবার বড় লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় শেয়ারদর ব্যাপক বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। তবে ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলে মনে হয়েছে। যার কারণেই শেয়ার বিক্রির প্রবণতা ও দরপতন দেখা গেছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির ৯ লাখ ৯৪ হাজার শেয়ারের মধ্যে ৫১ শতাংশ ধারণ করছে সরকার। আরও ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ ধারণ করছেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এটিও সরকারেরই শেয়ার। বাকি ৩৩ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ২৩ দশমিক ৪৮৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।