শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড ‘সুকুক’ছেড়ে এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য টাকা তুলবে সরকার। এ জন্য প্রথম দফায় ৫ হাজার কোটি টাকা তোলা হবে। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ বুধবার নিলামে বন্ড বিক্রি করে এ টাকা তুলবে। যে প্রকল্পের জন্য টাকা তোলা হবে, তার নাম ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাহিদামাফিক উন্নয়ন প্রকল্প’, বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এই সুকুকের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের বার্ষিক ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ হারে অর্থ পরিশোধ করা হবে। এই বন্ডের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এটি হবে ইজারা সুকুক, অর্থাৎ বিনিয়োগের বিপরীতে ভাড়া হিসেবে বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিশোধ করবে সরকার; যা দেওয়া হবে ছয় মাস পর পর।
সুকুকের বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাহিদামাফিক উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের ব্যয় ৯ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। গত নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। আগামী এক বছরে আরও ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে। সরকারের খরচ করা এই অর্থই এখন সুকুকে রূপান্তর করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে।
এ প্রকল্পের অধীনে দেশে ৪০ হাজার অতিরিক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, ৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ও স্যানিটেশন–সুবিধা প্রদান, ৩৬ হাজার ৫০০ শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ ও শিক্ষকদের ৩ হাজার ৫০০ শ্রেণিকক্ষে চেয়ার, টেবিল, আলমারি ও দেয়াল কেবিনেট সরবরাহ করা হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, নিলামে দেশি-বিদেশি যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে অবস্থিত যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব বা আল-ওয়াদিয়াহ রয়েছে, তার মাধ্যমে নিলামে অংশ নেওয়া যাবে। এই সুকুক বন্ডের প্রতিটির অভিহিত মূল্য ১০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজের জন্য বা যেকোনো গ্রাহকের জন্য ১০ হাজার টাকার গুণিতক যেকোনো পরিমাণে সুকুক কিনতে পারবে। আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পের জন্য সুকুকের মাধ্যমে প্রথম দফায় ৪ হাজার কোটি টাকা তুলেছিল সরকার। ওই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৮ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফার নিলামে ওই প্রকল্পের জন্য চলতি বছরের ২৮ জুন আরও ৪ হাজার কোটি টাকা তোলে সরকার।
সুকুক বন্ড ছেড়ে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ সংগ্রহের দিক থেকে বর্তমানে মালয়েশিয়া বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে সুকুক প্রচলিত। মুসলিম দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও এখন সুকুক চালু রয়েছে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর সুকুক ইস্যু ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নীতিমালা অনুমোদন করে সরকার। ওই নীতিমালার চতুর্থ অনুচ্ছেদে
সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে এই বন্ডের ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল’ বা এসপিভি এবং ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব দেয়।
এদিকে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও সুকুক ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শেয়ারবাজারে সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন মুদারাবা (মুনাফায় অংশীদারি), মুশারাকা (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি), মুরাবাহা (লাভে বিক্রি), ইশতিসনা (পণ্য তৈরি), করজ হাসান (উত্তম ঋণ), সালাম (অগ্রিম ক্রয়) ও ইজারা (ভাড়া) সুকুক প্রচলিত আছে। সরকার যে সুকুক ছাড়ছে, তা ইজারা (ভাড়া) সুকুক। ফলে মুনাফার হার নির্দিষ্ট।