টানা তিন কার্যদিবস পতনের পর গত দুই দিন ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজার। দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল সূচকে বড় উত্থান হয়। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। সূচকের পাশাপাশি এদিন এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ১৭ শতাংশের বেশি। বেড়েছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদরও। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সূচক ও লেনদেন দুটোই বেড়েছে।
গতকাল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিক্রির তুলনায় কেনার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পক্ষ থেকে মার্জিন ঋণ নীতিমালায় পরিবর্তন এনে তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগের ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম ২ মিনিট সূচকে পয়েন্ট যোগ হয়। এরপর পতন হলেও আবারো সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে সূচকে বড় পয়েন্ট যোগ হয়ে লেনদেন শেষ হয়। গতকাল দিন শেষে ৭৩ দশমিক ৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৭৪৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৬ হাজার ৬৬৯ পয়েন্ট। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বিএটিবিসি, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, আইএফআইসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, বিএসআরএম ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার।
ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে প্রায় ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৪১৮ পয়েন্ট। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ১৯ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ২ হাজার ৫২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৫০৪ পয়েন্ট।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৭২ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭৪৫ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৮টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২৮৬টির, কমেছে ৬৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে সাধারণ বীমা খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ দখলে নিয়েছে বিবিধ খাত। ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। গতকাল প্রায় সব খাতেই ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে সিমেন্ট খাতে, ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি), এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সুজ, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ও জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ)।
গতকাল ডিএসইতে দরবৃদ্ধির শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বিএসসি, হামিদ ফেব্রিকস, দ্য ঢাকা ডায়িং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী মিউচুয়াল ফান্ড, আমান কটন ফাইব্রাস, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং, আসিবি এমপ্লয়িজ-প্রভিডেন্ট মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান: স্কিম ১ ও মালেক স্পিনিং মিলস।
অন্যদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর কমার শীর্ষে থাকা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, এএমসিএল (প্রাণ), ইস্টার্ন কেবলস, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ফার্মা এইডস, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, জুট স্পিনার্স, আইএফআইএফ-ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড-ওয়ান ও এটলাস বাংলাদেশ।
অন্যদিকে সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ১৩১ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৬৬৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৬৬৯ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩০১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৫টির, কমেছে ৬০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৫১ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৪৩ কোটি টাকা।