পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের পর্ষদ ২০০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে অর্থায়নের পাশাপাশি উচ্চসুদের ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যয় করা হবে। সম্প্রতি ডিজিটাল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন সাপেক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদি এ বন্ড ইস্যু করা হবে। পুরোপুরি অবসায়নযোগ্য বন্ডটি শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে না। বন্ডের ডিসকাউন্টের পরিমাণ সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এক্ষেত্রে বন্ডটি যদি পুরোপুরি সাবস্ক্রিপশন হয় তাহলে এর বিনিয়োগকারীদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষে ২০০ কোটি টাকা ফেরত দেবে এনভয় টেক্সটাইলস। আর ডিসকাউন্ট দিয়ে কোম্পানি পাবে ১৬৮ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বন্ডে বিনিয়োগ মোট ১০টি সিরিজে বিভক্ত থাকবে এবং ছয় মাস পরপর একেকটি সিরিজের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির কাছে বন্ড জমা দিয়ে পাওনা অর্থ নিতে পারবেন।
জানতে চাইলে এনভয় টেক্সটাইলসের কোম্পানি সচিব এম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের কারণে আমাদের বিদ্যুৎ কেনা বাবদ ব্যয় এক-তৃতীয়াংশের মতো কমে যাবে। তাছাড়া আমাদের যন্ত্রপাতি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানোর জন্য এটি সহায়ক হবে। বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের প্রায় অর্ধেক ঋণ পরিশোধে এবং বাকিটা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যয় করা হবে।
এদিকে একই সভায় এনভয় টেক্সটাইলসের পর্ষদ রাজধানী লেক সার্কাস কলাবাগানে অবস্থিত এনভয় টাওয়ারে ৫ হাজার ৩২৬ বর্গফুটের কমার্শিয়াল স্পেস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
এর আগে সম্প্রতি বিদ্যমান কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোম্পানিটি। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৮ কোটি ৭০ লাখ প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটি ৮৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থে ময়মনসিংহের ভালুকায় বিদ্যমান কারখানায় ব্লেন্ডেড ইয়ার্ন উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো গবে। পাশাপাশি সংগৃহীত অর্থের কিছু অংশ উচ্চসুদের ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে পুরোপুরি অবসায়নযোগ্য এ প্রেফারেন্স শেয়ারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি রূপান্তর যোগ্য নয়। নির্ধারিত হারে অর্ধবার্ষিক ভিত্তিতে প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ দেয়া হবে।
চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এনভয় টেক্সটাইলসের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২১ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ১৩ পয়সা। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা।
সর্বশেষ ৩০ জুন ২০২১ হিসাব বছরে ৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। সমাপ্ত হিসাব বছরে এরই মধ্যে ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছিল কোম্পানিটি। সেই হিসাবে আলোচ্য হিসাব বছরে মোট ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পাচ্ছেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫৬ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১ টাকা ৬৩ পয়সা। ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য আগামীকাল ভার্চুয়াল মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আহ্বান করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল ১৫ নভেম্বর।
সর্বশেষ ঋণমান অনুযায়ী, এনভয় টেক্সটাইলসের সার্ভিলেন্স এনটিটি রেটিং ‘ডাবল এ-ওয়ান’। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, ২০২১ হিসাব বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং সমাপ্ত হিসাব বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির দায়সহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রত্যয়ন করেছে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (সিআরএবি) লিমিটেড।
রফতানিমুখী পরিবেশবান্ধব ডেনিম কোম্পানিটি ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এর অনুমোদিত মূলধন ৪০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৬৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৪৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৭ দশমিক ৬২, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক শূন্য ৬ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে বাকি ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার এনভয় টেক্সটাইলসের শেয়ার সর্বশেষ ৪৮ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ২১ টাকা ২০ পয়সা ও ৫৫ টাকা ২০ পয়সা।