শেয়ারবাজারে ইন্সুরেন্স কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত শেয়ার ৬০ শতাংশ রাখার বিধান করে ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাশ করে সরকার। সেই আইন বাস্তবায়নের জন্য এইন্সুরেন্সের উদ্যোক্তাদের দীর্ঘ ১১ বছর সময়ও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইন্সুরেন্স কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তা সেই আইন প্রতিপালন করেনি। অবশেষে খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) আইনটি বাস্তবায়নে সম্প্রতি তোড়জোড় শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে আইডিআরএ ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলোকে আইনটি বাস্তবায়নের জন্য লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে। গত মাসে ইন্সুরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘটা করে বৈঠকেও বসেছে।
বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, যেহেতু জাতীয় সংসদে আইনটি পাশ হয়েছে এবং এখনো তা বলবৎ আছে, সেহেতু কোম্পানিগুলোকে আইনটি বাস্তবায়নে তৎপর হতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভেতরে ভেতরে কিছু ইন্সুরেন্স কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের কোম্পানির শেয়ার ৬০ শতাংশ করার দিকে এগুচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের উদ্যোক্তারা তাদের শেয়ার ৫১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৬৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন।
এমন অবস্থায় প্রাইম ইন্সুরেন্সের উদ্যোক্তারা কোম্পানিটির সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশের নিচে নামিয়ে বসে আছেন। কোম্পানিটিতে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখেও তাদের ৪১.৪২ শতাংশ শেয়ার ছিল। বর্তমানে তা এসে ঠেকেছে ২৭.৫৪ শতাংশে। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করাতো দুরের কথা, ৩০ শতাংশ শেয়ারও এখন তারা ধারণ করছেন না।
সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২৭টি কোম্পানিকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার নির্দেশনা দিয়েছে। এরমধ্যে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত ৫২টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র প্রাইম ইন্সুরেন্স ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করার খেলাপির তালিকায় রয়েছে। ইন্সুরেন্স খাতের দলছুট এই কোম্পানিটি এখন ৩০ শেয়ার শেয়ার ধারণ করার চাপে রয়েছে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ি, কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ০৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯৮টি। এরমধ্যে উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ২৭.৫৪ শতাংশ হিসাবে ১ কোটি ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৩টি শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৯.২৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৩.২২ শতাংশ। যা আগের মাসেও একই পরিমাণ ছিল। সাম্প্রতিককালে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়েছে।
বিএসইসির নির্দেশনা ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ২.৪৬ শতাংশ শেয়ার বা ১০ লাখ ০৫ হাজার ৫৮৭টি শেয়ার। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৭ কোটি টাকার কাছাকাছি। এসব শেয়ার কোম্পানিটিতে এই মাসের মধ্যেই সংগ্রহ করতে হবে।
আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ অর্থবছরে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ওই বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা।
আগের অর্থবছর ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৪৩ পয়সা। কিন্তু কোম্পানিটি ওই বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোন ডিভিডেন্ড দেয়নি।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে কোম্পানিটি ধারাবাহিক মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে। নিচে প্রান্তিকভিত্তিক মুনাফার চিত্র দেওয়া হলো-
প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা: চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫৬ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৫ পয়সা।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা: দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ২৬ পয়সা। দুই প্রান্তিক মিলে ইপিএস হয়েছে ৭৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৩১ পয়সা।
তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা: তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ২৭ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ১ টাকা ৪১ পয়সা। তিন প্রান্তিক মিলে ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ০২ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১০ পয়সা।
সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৯ টাকা ২০ পয়সায়। সেই হিসাবে কোম্পানিটির পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ২৫.৬৯ পয়েন্টে।
বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্চতা এবং করপোরেট সুশাসনের জন্য প্রাইম ইন্সুরেন্স সম্প্রতি দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)-এর সেরা পুরস্কার লাভ করেছে।