নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাজার তৈরির লক্ষ্যে সিলেটে ৫০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড।। সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর কাদির শফি বলেন ‘সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১৫০ একর জমির প্রয়োজন এবং আমরা ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণ শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে ৩৫০ কোটি টাকা থেকে ৪০০ কোটি টাকা হতে পারে।
কোম্পানিটির নিজস্ব উৎস থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ ব্যয়ের একটি অংশ পূরণ করা হবে এবং বাকি অংশ ব্যাংক ঋণ থেকে পূরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও বারাকা পতেঙ্গা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং প্রকল্প প্রস্তাবনাটি আলাদাভাবে সিলেট ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে জমা দেওয়া হয়েছে।
মনজুর কাদির শফি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যকর হবে না। কারণ এখানকার বর্জ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত ক্যালোরি থাকে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারী নীতি ও বৈশ্বিক সচেতনতার অংশ হিসেবে কার্বন নিঃসরণ কমাতে আগামী দিনে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রেখে বারাকা পতেঙ্গার বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, স্থানীয় বিদ্যুৎ খাতে ন্যায্য অংশ ধরে রাখার জন্য সংস্থাটি এখন নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে মনোনিবেশ করছে।
বাংলাদেশের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, সরকার ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির অবদান প্রায় ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যেমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যা এখন ৩ শতাংশের কম।
বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের চেয়ারম্যান গুলাম রব্বানী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন প্রকল্পে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত উদ্যোগগুলি গ্রহণ করছি।’
পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, কোম্পানিটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এগিয়ে থাকবে।
‘আমরা বিশ্বাস করি, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের চাহিদা অনেক বেশি হবে এবং আমরা সেক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান হতে চাই।’
কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ কমবে বলে তিনি মনে করেন।
এর আগে বারাকা পতেঙ্গা, দেশের বিদ্যুৎ খাতে একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপে তার প্ল্যান্টে একটি ফ্লু গ্যাস ডিসালফিউরাইজেশন সিস্টেম স্থাপন করেছিল।
সিস্টেমটি ফার্নেস অয়েল থেকে সালফার নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রকৃতিকে দূষণ থেকে রক্ষা করে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মূল্যবান সম্পদ পুনর্ব্যবহার ও পুনঃব্যবহার করার জন্য স্টিম টারবাইন জেনারেটর প্ল্যান্টও স্থাপন করেছি যাতে জ্বালানি পোড়ানোর হ্রাস নিশ্চিত করা যায়।’
বারাকা পতেঙ্গা ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের দক্ষিণ পতেঙ্গায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি একক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
সাত বছরের মধ্যে কোম্পানিটি ২৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসহ মোট ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হলো- কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেড (কেপিএল), বারাকা শিকলবাহা পাওয়ার লিমিটেড এবং বারাক সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
চলতি বছরের এপ্রিলে বারাকা পতেঙ্গা ২২৫ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য আইপিও অনুমোদন পায়।
কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২১ অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ১২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এটি কোম্পানিটির প্রথম ডিভিডেন্ড। আলোচ্য অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৬ টাকা ৪৭ পয়সা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২১) কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ১৩ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১ টাকা ০৭ পয়সা।
সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৮ টাকা ৬০ পয়সায়। সেই হিসাবে এর পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৮.৫৪ পয়েন্টে।